নিনা আফরিন ,পটুয়াখালী : পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পূর্বশত্রুতার জের ধরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি ও যুবদলের কর্মীদের হামলায় নয়া শতাব্দী ও দ্যা ডেইলি পোস্ট'র উপজেলা প্রতিনিধি সিয়াম রহমান হিমেলসহ ৫ জন আহত হয়েছে। এঘটনায় মির্জাগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক আহত সাংবাদিক সিয়াম রহমান হিমেল ঐদিন রাতে বাদী হয়ে মির্জাগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র সহ বিএনপি ও যুবদলের ৩জনকে আটক করেছে।
আহত সাংবাদিক সিয়াম রহমান হিমেল জানান, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলা বিএনপির সদস্য জনি মুন্সী তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আমাকে মালিকানার অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হইনি। এর পর থেকে তার একান্ত সহযোগী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সেজান জাকির ও তার সহোযোগীরা গত ৬-৭ মাস যাবত আমাকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি -ধমকি দিয়ে আসছিল। হুমকি -ধমকির বিষয়টি আমি উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে জানানোসহ মির্জাগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর সেজান জাকিরসহ অন্যান্যরা আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) বিকালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান বর্ষপূর্তিতে উপজেলা বিএনপির আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালীর সংবাদ সংগ্রহকালে র্যালীটি উপজেলা সদর সুবিদখালী বাজার ব্রীজ অতিক্রম কালে সেজান জাকিরসহ ৭/৮ জন আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে আমাকে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় আমাকে বাঁচাতে কয়েকজন এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা চালালে আরও ৪জন আহত হয়। আহতদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এসময় তারা পুনরায় হামলা চালানোর লক্ষ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে মহড়া দেয়।
এঘটনায় সাংবাদিক সিয়াম রহমান হিমেল বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জাহিদ হাসান ওরফে পরাগ মুন্সীকে প্রধান আসামী ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সৌরভ মুন্সী ও উপজেলা বিএনপির সদস্য জনি মুন্সীসহ ৭জনের নাম উল্লেখসহ ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা চেষ্টা মামলা করেন।
সেনাবাহিনী ক্যাম্প থেকে পাঠানো প্রেস নোট সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক সিয়াম রহমান হিমেলকে রক্ষা করতে কয়েকজন এগিয়ে গেলে আসামীরা তাদেরকেও মারধর করে ৫ জনকে গুরুতর ও সাধারন বিভিন্ন মাত্রার জখম করে,তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
কিছু সন্ত্রাসী হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের পুনরায় হামলা করার জন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একত্রিত হয়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মির্জাগঞ্জ ক্যাম্প কমান্ডারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টিম এবং মির্জাগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করার জন্য মির্জাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়।
উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ঘটনার সাথে জড়িত এজাহারনামীয় ১নং আসামী মোঃ জাহিদ হাসান ওরফে পরাগ মুন্সি (৪০) কে ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় অস্ত্র সহ হাতেনাতে আটক করা হয় এবং ২নং আসামী সৌরভ মুন্সী (৩৫) ও ৩নং আসামী জনি মুন্সী (৩৬) কে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মির্জাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় সাংবাদিক সিয়াম রহমান হিমেল বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ মামলার প্রধান আসামী জাহিদ হাসান ওরফে পরাগ মুন্সীসহ ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার ৩জনকে আদালতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
