শিরোনাম
◈ গোপালগঞ্জে কাদের গুলিতে চারজন নিহত? ◈ ফিরে দেখা ১৮ জুলাই: ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ, সারাদেশে নিহত ৩১ ◈ ইরানে ফের হামলার পরিকল্পনা ইসরায়েলের ◈ ওবামা দম্পতির বিয়েবিচ্ছেদের গুজব উড়িয়ে মিশেল বললেন: "এক মুহূর্তের জন্যও বারাককে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবিনি" ◈ কুমিল্লায় হত্যার রহস্য উন্মোচন: ঋণের টাকা পরিশোধ করতে অটো চালক বন্ধুকে কুপিয়ে হত্যা, প্রধান অভিযুক্ত গ্রেফতার ◈ গোয়েন্দা ব্যর্থতায় হাসিনার পতন, কলকাতায় বসে দাবি হাছান মাহমুদের ◈ দুর্দান্ত খে‌লে‌ছে বাংলা‌দেশ নারী দল, ভুটান‌কে হারা‌লো ৩-০ গো‌লে ◈ ১৮ জুলাই যে পদ্ধতিতে ৫ দিন মেয়াদি ফ্রি ইন্টারনেট পাবেন গ্রাহকরা ◈ মতিঝিলে সেনা কল্যাণ ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট ◈ ১৭ বছরের কিশোরকে নিয়ে পালালেন ৪০ বছর বয়সী দুই সন্তানের জননী

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২৫, ০৩:০৬ রাত
আপডেট : ১৮ জুলাই, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গোপালগঞ্জে কাদের গুলিতে চারজন নিহত?

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। গোপালগঞ্জে নিহতদের শরীরে গুলির আঘাত ছিল বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার৷ মারণাস্ত্র ব্যবহার ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷ তবে অস্বীকার করছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী৷

পুলিশ প্রধান দাবি করেছেন, কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি৷ সেনাবাহিনী বলপ্রয়োগের কথা জানালেও ওই চার জন নিহত হওয়ার দায় নিয়ে কোন তথ্য দেয়নি৷ চারজন কাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

গোপালগঞ্জের বুধবারের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরো ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে৷ আরো জানানো হয়েছে, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার ঘটনার জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷ সরকার ন্যায় বিচার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷''

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এখন মোটামুটি স্বাভাবিক বলে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী৷ গোপালগঞ্জের ঘটনা সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কি না এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘গোয়েন্দা তথ্য ছিল৷ তবে এত পরিমাণ যে হবে, ওই তথ্য হয়তো ছিল না৷”

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা অভিযোগ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পারেনি৷ এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আপনিও তো অনেক কিছু বলতে পারেন৷ যার যার বক্তব্য সে সে দেবে৷’’

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি

বুধবারের ঘটনায় নিহত চারজনের লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷ মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে৷ বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক৷ বুধবার রাত থেকে গোপালগঞ্জ শহরে কারফিউ বলবৎ আছে৷ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,  চলমান কারফিউ শুক্রবার সকাল ১১টা পর্যন্ত চলবে৷ তিন ঘণ্টা বিরতির পর শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে৷

শহরে পুলিশ , র‌্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি টহল দিচ্ছে৷ সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে৷ 

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বক্তব্য

সংঘর্ষে যে চারজন প্রাণ হরিয়েছেন তাদের পরিবার জানিয়েছে নিহতদের শরীরে গুলির আঘাত আছে৷  তবে বুধবার ঘটনার পর পুলিশের আইজি বাহারুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘পুলিশ কোনো লেথাল (প্রাণঘাতী) আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি৷” স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ এবং ছবিতে সেনাসদস্যদের প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে দেখা গেছে৷ পুলিশেরও গুলি করার ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ হয়েছে৷ তবে কোনো পক্ষই ওই নিহত চারজন তাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে স্বীকার করছে না৷

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘‘রাজনৈতিক সংগঠনের সমাবেশ চলাকালে মঞ্চে আবার হামলা চালানো হয়৷ একই সঙ্গে জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়৷ এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মাইকে বারবার ঘোষণা দিয়ে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তারা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং বিপুল ককটেল, ইটপাটকেল ছুঁড়ে মারে৷ একপর্যায়ে সেনাবাহিনী আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়৷ পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে বিশৃঙ্খলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ একপর্যায়ে গোপালগঞ্জে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে খুলনায় স্থানানন্তর করা হয়৷’’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘‘বর্তমানে গোপালগঞ্জে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে৷ এবং প্রশাসন কর্তৃক জারিকৃত কারফিউ চলমান রয়েছে৷”

এদিকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘কোনো বাহিনী কোনো লেথাল ওয়েপন ব্যবহার করেছে কীনা তা তদন্ত করে বলা যাবে৷ যে চারজন নিহত হয়েছেন তারা কীভাবে মারা গেছেন তাও তদন্তের আগে বলা যাবে না৷ আহতদের ব্যাপারেও তদন্ত চলছে৷”

তিনি জানান, "আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দুই-একজন যারা আহত হয়েছেন তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন৷ কেউ গুরুতর আহত হননি৷” পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানান তিনি৷

নিহত- আহতদের পরিবার যা বলছে

যে চারজন নিহত হয়েছেন তাদের একজন সোহেল রানা৷ তার দুই শিশু সন্তান আছে৷ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সোহেলের গোপালগঞ্জের চৌরঙ্গি এলাকায় মোবাইল ফোনের দোকান আছে৷ তার মামা জাহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, "তার পায়ে এবং বুকে গুলি লেগেছে৷ সে চৌরঙ্গি এলাকায় দুপুরের দিকে ছিলো৷ পুলিশ আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তরের পর বৃহস্পতিবার ভোর রাতে দাফন করেছি৷ আমরা কোনো মামলা করিনি৷ কার গুলিতে সে মারা গেছে তা আমরা বলতে পারবো না৷”

নিহত আরেকজন ইমনের চাচা শাকিল মোল্লা বলেন, ‘‘গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সড়কে ইমনের বা পায়ে গুলি করা হয়েছে৷ গুলি করার পর তাকে টেনে হিঁচড়ে নেয়া হয়৷ বুট জুতা দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়৷ পোশাকধারীদের সঙ্গে তখন একজন সিভিল ড্রেসেও ছিলেন, সেও তাকে লাথি মারে৷ ইমনের খালাতো ভাই রমজান তাকে বাঁচাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়৷ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷”

তিনি বলেন, "ইমন একটি মুদি দোকানে কাজ করতো৷ দুই ভাইবোনের মধ্যে সে বড়৷ সে-ই পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম৷ রাতেই পুলিশ তার লাশ হস্তান্তর করেছে৷”

‘‘গুলি করে টেনে নেয়ার যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ওটাই হলো ইমন,” বলেন তিনি৷

মামলার প্রশ্নে শাকিল বলেন, ‘‘মামলা করবো কীভাবে? আমরা ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় আছি৷” এই ঘটনায় আহতদের কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ তাদের একজন হলেন রিকশাচাক রমজান মুন্সি৷ তার ভাই হীরা মুন্সি জানান, ‘‘সে রিকশা চালাচ্ছিল তখন তার বুকে গুলি লাগে৷ অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় বুধবার রাতেই তাকে আমরা ঢাকায় নিয়ে এসেছি৷ তার অবস্থা খারাপ৷ তার অপারেশন লাগবে৷ আরো কয়েকজন আহতকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়েছে৷”

বুধবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস জানান, ‘‘নিহত চারজনকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়৷ আর আহত ২০-২৫ জনের অধিকাংশের শরীরেই গুলির আঘাত আছে৷’’

অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না৷” তারা একই সঙ্গে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছে৷

বিবৃতিতে আসক বলেছে, ‘‘অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করতে হবে৷ এনসিপির নেতা ও সমর্থকদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার পেছনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে৷ পাশাপাশি সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবিও আসকের৷

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘জনসাধারণের ওপর বল প্রয়োগ, গুলি চালানো ও প্রাণহানির ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড ও সংবিধান-উভয়ের চরম লঙ্ঘন৷ এ ধরনের ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক পরিসর, মানবাধিকারের মূল্যবোধ এবং নাগরিক নিরাপত্তার প্রতি একধরনের হুমকি৷ নাগরিকের জীবন রক্ষা রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব৷ গোপালগঞ্জের ঘটনায় রাষ্ট্র সে দায়িত্ব পালনে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার এবং গুলির শব্দ স্পষ্টভাবে শোনা যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে আসক বলেছে, ‘‘পুলিশের মহাপরিদর্শক গণমাধ্যমে বলেছেন পুলিশ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেনি৷ তাহলে এই আগ্নেয়াস্ত্র কারা ব্যবহার করলো? আসক মনে করে, এ প্রশ্নের সুস্পষ্ট ও প্রামাণ্য ব্যাখ্যা দেওয়া না হলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি, ভয় ও প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা আরও বাড়বে৷”

আসকের সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর আবু আহমেদ ফয়জুল কবির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা দেখেছি তাতে যারা আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন তাতে তো স্পষ্ট যে তাদের হাতে অস্ত্র ছিল এবং তারা গুলি করেছেন৷ তারা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছেন৷ পুলিশ প্রধান বলছেন মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি৷ এখন তদন্ত করে সরকারের প্রকাশ করা উচিত ওই গুলি কারা করেছে৷ ঢাকা মেডিকেলে ওই ঘটনায় আহত যারা ভর্তি হয়েছেন তারা গুলিতে আহত হয়েছেন৷”

তিনি আরো বলেন, ‘‘এক বছর আগে এই মারণাস্ত্র ব্যবহার ও বল প্রয়োগের বিরুদ্ধেই আমরা সোচ্চার ছিলাম৷ এই ধরনের পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দক্ষতার সাথে কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে তার প্রশিক্ষণ দরকার৷”

মানবাধিকারকর্মী ও গুম কমিশনের সদস্য নূর খান বলেন, ‘‘একজন মানবাধিকারকর্মী হিসাবে গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও মারণাস্ত্র ব্যবহারকে কোনোভাবেই গ্রহণ করা যায় না৷ এর বিরুদ্ধেই আমাদের দীর্ঘদিনের অবস্থান৷ পাশাপাশি এনসিপির সমাবেশে হামলার নিন্দা জানাই৷’’

তিনি মনে করেন এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব ছিল৷ সরকার চাইলে নানা ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারতো৷ এখন যা হলো তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি৷

এনসিপি যা বলছে

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন  বলেন, ‘‘পদযাত্রা আর মার্চ টু গোপালগঞ্জের মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই৷ এটা ছিলো আমাদের প্রচারের একটি কৌশল৷ আমরা এই পদযাত্রার প্রচারে নানা কৌশল ব্যবহার করছি৷ আমরা তো সারাদেশেই যাচ্ছি৷ আর গোপালগঞ্জ তো বাংলাদেশের বাইরে না৷ আমরা সব জায়গায় যাচ্ছি সেখানে কেনো যেতে পারবো না৷”

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘তারা পরিস্থিতি জানতো৷ কিন্তু সেই অনুযায়ী পর্যাপ্ত ফোর্স রাখেনি৷ সেখানে তো আমাদের হত্যার পরিকল্পনা ছিলো৷’’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সেখানে তো তারা মব বলি আর যাই বলি আমাদের জীবন নিতে চেয়েছিলো৷ ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে আর কী করতে পারতো৷ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের লোকজনের হাতেও তো আগ্নেয়াস্ত্র ছিল৷ তারাও তো গুলি ছুড়েছে৷”

ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

গোপালগঞ্জে বুধবার এনসিপির সমাবেশের কয়েকদিন আগে থেকেই পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খল বাহিনী সক্রিয় ছিল৷ তারপরও এমন পরিস্থিতি কেন হলো?

১ জুলাই থেকে সারাদেশে এনসিপির শুরু হওয়া ‘পদযাত্রা’ গোপালগঞ্জের ক্ষেত্রে নাম পরিবর্তন হয়৷ এনসিপির ফেসবুক পেজে একদিন আগে ১৬ জুলাই এর নাম দেয়া হয় ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’৷ কয়েকজন সমন্বয়কও তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে এটিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ' হিসেবে উল্লেখ করেন৷  

ওই ঘোষণার পর থেকেই নানা ধরনের খবর ছড়িয়ে পড়ছিল৷ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার ঘিরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়৷ বুধবারের আগেই গোপালগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়৷ আর সেনাবাহিনীও সেখানে অবস্থান নেয়৷ বুধবার সকাল ১১টায় গোপালগঞ্জ পৌর মুক্তমঞ্চে এনসিপির সমাবেশের নির্ধারিত সময় ছিলো৷ এনসিপি নেতারা পুলিশি নিরাপত্তায় বুধবার দুপুর ২টার দিকে গোপালগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন৷ তবে তার আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের গাড়িতে এবং সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে৷ সমাবেশ শুরুর আগে এনসিপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা পৌর মুক্তমঞ্চে ওঠেন৷ এর কিছুক্ষণ পর ৫০-৬০ জনের একটি দল মঞ্চ ভাঙচুর এবং আগুন দেয়৷ সকাল থেকেই গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন প্রবেশ পথে গাছ ফেলে ব্যরিকেড দেয়া হয়৷ মঞ্চে আগুনের পর মূলত পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ এরমধ্যেই এনসিপি নেতারা হাজির হয়ে বেলা দুইটার পরপর সমাবেশ শুরু করেন৷ ৪০ মিনিটের মধ্যে তারা সমাবেশ শেষ করেন৷

সমাবেশ করে ফেরার পথে শুরুতেই এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলা হয়৷ তারা বিকল্প পথে ফেরার চেষ্টা করলে আবারো হামলা হয়৷ সেই অবস্থায় এনসিপি নেতারা জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন৷ পরে তারা সেনাবাহিনীর এপিসিপিতে করে বিকাল ৫টার দিকে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করে খুলনায় যান৷

স্থানীয় কয়েকজন জানান, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন আগেই শহরে অবস্থান নিয়েছিলো৷ তাদের টার্গেট ছিলো এনসিপিকে সমাবেশ করতে না দেয়া৷ তারা লাঠি, দেশীয় অস্ত্র, ঢাল নিয়ে মহড়া দেয়৷

কয়েক ঘণ্টা ধরে পুলিশ ও সেনা সদস্যদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷ পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ তখন ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়৷ এনসিপি নেতারা খুলনায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘তাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা চালিয়েছে৷” পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা৷

এই ঘটনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বুধবার সৈয়দপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা যে পুলিশ বাহিনী নিয়ে কাজ শুরু করেছি, সেই পুলিশ আওয়ামী সরকারের নিয়োগ করা৷ তারা আমাদের পুরোপুরি সহযোগিতা করছে না৷ শেখ হাসিনা পুরো রাষ্ট্রকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে গেছে৷”

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়