‘সনত চক্র বর্ত্তী, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা আবারো গোপালগঞ্জে যাব। আমরা জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রতিটা ঘরে ঘরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পতাকা উড়াবো। গোপালগঞ্জে মুজিববাদীদের জায়গা হবে না, জায়গা হবে বাংলাদেশ পন্থীদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় ফরিদপুর শহরে পদযাত্রা শেষে জনতা ব্যাংকের মোড়ে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, সারাদেশে আমাদের যে কমিটমেন্ট, গোপালগঞ্জের প্রতিও আমাদের একই কমিটমেন্ট।
গোপালগঞ্জবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্যের আমরা বিরোধিতা করি। গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করব। আমরা এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জের আর কোনো সাধারণ মানুষকে যেন হত্যা করা না হয়। রিফাইন্ড আওয়ামীলীগের নতুন ভার্সন গতকাল মানুষ দেখেছে। গোপালগঞ্জের সাধারণ মানুষকে মুজিববাদ থেকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে গোপালগঞ্জ যাইনি। আমাদের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। মুজিববাদী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র হামলা চালায় আমাদের ওপর। যে রকমটা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানেও হয়েছিল।
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ফ্যাসিবাদের দোসর এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ঘাপটি মেরে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুরো বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার নেতাকর্মীরা গতকাল গোপালগঞ্জে ছিল। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে, সকালের নাশকতার পরেও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পেয়েই আমরা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছি।
পদযাত্রা করিনি, পথসভা করেছি শুধু। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের লোকজনকে আসতে দেওয়া হয়নি। এরপরেও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথসভা শেষ করেছি। যাওয়ার পথে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তাবাহিনী যেভাবে ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে, আমরা সেভাবে সেখান থেকে বের হয়েছি।
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের এত হত্যাযজ্ঞের পরেও ৫ আগস্টের পরে অনেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত, আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।
৫ আগস্টের পরে আমরা বহুবার বলেছি, আমরা আইনি ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় জুলাই গণহত্যার বিচার চাই।
গোপালগঞ্জে চারজনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে নাহিদ বলেন, আমরা চারজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডজ্ঞানকে আমরা সমর্থন করি না, প্রত্যাশা করি না। সন্ত্রাসীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে গোপালগঞ্জের একজন নিরীহ মানুষও যেন হয়রানি না হয়।
নাহিদ হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, যা কিছু হয়ে যাক জুলাই পদযাত্রা থামানো যাবে না। ৬৪ জেলায় পদযাত্রা করেই আমরা ঘরে ফিরবো। যারা গতকালের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, রাস্তায় নেমেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তিনি সর্বশেষে বলেন, সারাদেশে পদযাত্রা শেষ করে ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই সনদের জন্য আমরা অবস্থান করবো। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৩ আগস্টের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি সকলকে আহ্বান জানান।
এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের দোসরেরা চুপিসারে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখে। রাতের ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। দল হিসেবে এবং ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের সকলকে বিচারের মুখে দাড় করাতে হবে।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির মূখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারি, শ্রমিক উইংয়ের সমন্বয়ক মাজহারুল ইসলাম, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম, এনসিপির ফরিদপুরের সম্বনয়কারী সৈয়দা নিলীমা দোলা ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তৌহিদ আহমেদ আশিক প্রমুখ।
ফরিদপুর পদযাত্রায় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, এসসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা ও দক্ষিণাঞ্চল সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ্ প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর শহরের জনতা ব্যাংকের মোড়ে এনসিপির জেলা কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মঞ্চে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। খুলনা থেকে সকালে রওনা হয়ে দুপুর দেড়টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা গাড়ী বহর নিয়ে ফরিদপুর শহরে প্রবেশ করে সরাসরি ফরিদপুর সার্কিট হাউজে যান।
সেখান থেকে দুপুর ২ টার দিকে পদযাত্রা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বেলা আড়াইটার দিকে পদযাত্রা সহকারে তারা আলীপুরের মোড়ে ইমামউদ্দিন স্কয়ারে সমাবেশ মঞ্চে গিয়ে বক্তব্য রাখেন। পরে আলীপুরে এনসিপির ফরিদপুর জেলা অফিস উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ফরিদপুর শহর নিরাপত্তায় ঢাকা ছিল। এনসিপির পদযাত্রায় পুলিশ, র্যাব, কোস্টা গার্ড, বিজিবি, সেনাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।