গাজীপুরের শ্রীপুরে বসতবাড়ির বারান্দায় স্মৃতি রানী (২৬) নামের এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি দা ও এক জোড়া জুতা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বমরী বাজারের কামারপট্রির মৃত গোপাল মিস্ত্রির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত স্মৃতি রানী ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর থানার দৌলতপুর গ্রামের সুনিল পালের মেয়ে। তার স্বামী কাব্য সরকার শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের কেশব চন্দ্র সরকারের ছেলে। পারিবারিক বিরোধের কারণে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কাব্য বরমী বাজারের কামারপট্টিতে নানা মৃত গোপাল মিস্ত্রির বাড়িতে থাকতেন।
প্রতিবেশী ও বাড়ির লোকজন জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে স্মৃতির স্বামী কাব্য ভারতের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। আর বাড়ির দক্ষিণ ভিটির ঘরে কাব্যের নানি ও মামি ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন মামা। মামাতো বোন অপস্বরা পড়ছিল পাশের ঘরে। হঠাৎ স্মৃতির চিৎকার শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তারা। পরে তাদের চিৎকার শুনে ছুটে আসে বাজারের লোকজন।
এ সময় স্মৃতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখেন তারা। পরে উপস্থিত লোকজন রক্তাক্ত স্মৃতিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা সুনীল পাল বলেন, আড়াই বছর আগে পারিবারিকভাবে স্মৃতির বিয়ে হয়। তার সংসারে দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সোমবার রাত ৯টা ১৪ মিনিটে সবশেষ মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে তার কথা হয়। তখন স্মৃতি ফোন করে জানায়, তার স্বামী সন্ধ্যায় ভারতের উদ্দেশে রওনা দিয়ে চলে গেছে। ছেলে শ্রীয়ান ঘুমাচ্ছে।
বাবা বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে কাব্য ফোন করে বলে স্মৃতির যেন কিছু হয়েছে, দ্রুত শ্রীপুর হাসপাতালে যান। পরে আমি ছুটে হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পাই।‘
হাসপাতালে কাব্যও ছিল। জানিয়ে সুনীল পাল বলেন, ‘আমার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করে বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে গেছে ঘাতক। রাতে পুলিশ এসে বাড়ির পেছন থেকে একটি রক্তমাখা ধারালো দা ও দুটি সেন্ডেল উদ্ধার করেছে।’
কাব্যের নানী রুক্কুনা বলেন, ‘সকালে মন্দিরে পূজা দেই। তাই রাতে একটু আগে শুয়ে পড়ি। ছেলের বউও পাশে শুয়েছিল। হঠাৎ স্মৃতির দিদা বলে চিৎকার শুনতে পাই। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি সে বারান্দায় ঢলে পড়ছে। আমাদের ডাক চিৎকার শুনে বাজারের লোকজন ছুটে আসে। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
প্রতিবেশী ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন জানান, ‘রাত আনুমান সাড়ে ৯টার দিকে ওই বাড়িতে হঠাৎ চিৎকার শুনে বাড়ির ভেতর যাই। বারান্দায় স্মৃতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বরমী বাজারের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুদেব চক্রবর্তী জানান, রাত ১০টা ৪০ মিনিটের সময় স্মৃতিকে হাসপাতালে আনা হয়। এর আগেই তার মৃত্যু হয়। নিহতের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া ডান হাতের কব্জির কাছাকাছি পর্যন্ত কাটা ছিল। খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রক্তমাখা ধারালো নতুন দা, এক জোড়া সেন্ডেল উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। কে কেন তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে তা জানতে কাজ করছে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।