ঈদ বা পূজার মতো বড় উৎসবগুলোতে ঘরে ফেরা মানুষের রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন ব্যস্ত সড়ক ও সেতুতে টোল দেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করা। পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে গাড়ি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে এখনো নগদ টাকানির্ভর টোল ব্যবস্থাপনায় প্রচুর সময় নষ্ট হয় এবং তীব্র যানজট তৈরি হয়।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করা আরিয়ান আরিফ জানান, গত সপ্তাহে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টোল ফি দিতে তার প্রায় ৯০ মিনিটের মতো সময় লেগেছিল। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাতে হাতে টাকা নেওয়ার এই পদ্ধতির কারণে অ্যাম্বুলেন্সসহ সবারই অযথা হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে এবং মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।
দেশে ডিজিটাল অর্থব্যবস্থা এক দশকে বেশ উন্নত হলেও টোল ব্যবস্থাপনা এখনো নগদ টাকানির্ভর থাকায় সাধারণ মানুষজন ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গত ১ অক্টোবর সিলেট থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে তার ১৭ ঘণ্টা সময় লেগেছিল। পথে কয়েকটি সেতুতে টোল দেওয়ার জন্য বিশাল লাইনে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়।
তিনি বলেন, ইটিসি (ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন) চালু থাকলে দ্রুত এসব সেতু পার হওয়া যেত। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা অগাস্টিন সুজন বলেন, তিনি নিয়মিত গাড়ি চালিয়ে পদ্মা সেতু পার হন এবং তার বাড়ি যেতে চার-পাঁচটি সেতুর টোল দিতে হয়। প্রতিটি সেতুতে গড়ে ১০ মিনিট সময় দিলেও অতিরিক্ত অনেক সময় নষ্ট হয় বলে তিনি মনে করেন।
সাধারণ মানুষের এই সমস্যার কথা বিবেচনা করে পদ্মা সেতুতে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন বা ইটিসি ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো দেশের একটি প্রধান মহাসড়কে নগদবিহীন ও নন-স্টপ টোল আদায়ের এই ব্যবস্থা চালু হয়।
নতুন এই ব্যবস্থায় আর টোল প্লাজায় গাড়ি থামাতে হবে না। নিবন্ধিত গাড়িগুলো নির্দিষ্ট ইটিসি লেন ব্যবহার করে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পার হতে পারবে। এ সময় ব্যবহারকারীর প্রি-পেইড অ্যাকাউন্ট থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত টোল কেটে নেওয়া হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, এই ইলেকট্রনিক টোল সেবা ব্যবহার করতে হলে প্রথমে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ট্যাপ অ্যাপের ডি-টোল অপশনে গাড়ি নিবন্ধন ও রিচার্জ সম্পন্ন করতে হবে। এরপর পদ্মা সেতুর আরএফআইডি বুথে একবারের জন্য যাচাই-বাছাই শেষ করলে ভবিষ্যতে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়িকে শনাক্ত করতে পারবে।
সরকার পুরো টোল প্রক্রিয়াকে প্রযুক্তিনির্ভর করতে বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, 'ই-টোল সেবা সারা দেশে চালু করার জন্য আমরা কাজ করছি।' সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা এই কাজটি করছেন।
তিনি জানান, আগে আরএফআইডি যন্ত্র ব্যবহার করে ডিজিটাল টোল ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করা হলেও গাড়িচালকদের আগ্রহের অভাবে তা সফল হয়নি। বর্তমানে নাগরিকদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ই-টোল ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে মোবাইল অ্যাপে গাড়ির তথ্য ও ওয়ালেট নম্বর যোগ করেই টোল দেওয়া যাবে।
এছাড়া, যাদের ওয়ালেট নেই, তারা ভবিষ্যতে কিউআর টাচ অ্যান্ড পাস সেবা ব্যবহার করে টোল দিতে পারবেন। সরকার মূলত একটি ইউনিফায়েড টিকেটিং সেবা চালুর কাজ করছে, যেখানে বাস, ট্রেন, ট্রাক, বিমান থেকে শুরু করে সব টিকিট ও টোল সেবা একটি প্ল্যাটফর্মে এনে নাগরিকদের হয়রানি কমানো এবং ডিজিটাল সেবাকে আরও উন্নত করার কাজ চলছে।
সূত্র: প্রথম আলো