নিজস্ব প্রতিবেদক: [২] শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলছে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলন। ক্যাম্পাসে এ উত্তেজনার মধ্যেই নতুন একটি ঘটনা চাঞ্চল্যের জন্ম দিল।
[৩] বিশ্ববিদ্যালয়ের পাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত এক শিক্ষকের জন্য ফেনসিডিল আনতে গিয়ে জাহিদুর রহমান নামে এক নিরাপত্তাকর্মীসহ দুই ব্যক্তি আটক হয়েছেন।
[৪] সোমবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন সংলগ্ন টিচার্স ডরমেটরিতে ওই শিক্ষককে ফেনসিডিল দিতে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীরা তাকে হাতে-নাতে আটক করেন।
[৫] এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ গণমাধ্যমকে বলেন, এক যুবক উপাচার্যের বাসভবনের দিকে ঢুকছিলেন। তিনি এখানকার আউট সোর্সিং এর সিকিউরিটি গার্ড। শিক্ষার্থীরা তাকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখন তার হাতে একটি বোতল পাওয়া যায়। ওই বোতলে ফেনিসিডিল লিখা। আটকের পর আমাদের কাছে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় তাকে এবং তার সঙ্গে থাকা আরও একজনকে আটক করা হয়েছে।
[৬] তবে আটক অপর ব্যক্তির নাম জানাতে পারেননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।
[৭] আজবাহার আলী শেখ আরও বলেন, আটকের পর সে একটি নাম বলেছে (অধ্যাপক ড. মাজহারুল হাসান মজুমদার)। যার কথা বলেছে উনার ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[৮] ঘটনার সময় উপস্থিত সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা জানান, আন্দোলনের ১১তম দিনের (সোমবার) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ‘সিকিউরিটি চেকিং’ বসিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, পুলিশ ও সাংবাদিকের বাইরে বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এ ছাড়া উপাচার্য বাসভবনের সামনেও সিকিউরিটি চেকিং বসিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তৈরি করছেন মানব দেয়াল। উপাচার্যের বাসভবনের সামনের চেকিং পয়েন্টে মাদকদ্রব্যসহ ধরা পড়েন ওই যুবক। তিনি শাবির গেস্ট হাউসে পার্ট-টাইম সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করেন বলে জানিয়েছেন। তার নাম জাহিদুর রহমান।
[৯] তারা আরো জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে জাহিদুর রহমান নামের ওই সিকিরিটি গার্ডকে একটি ওষুধের মোড়কের ভেতরে ফেনসিডিলের বোতলসহ ধরেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় সিকিরিটি গার্ড তাদের জানান, এক শিক্ষক অসুস্থতার কথা বলে ওষুধ নিয়ে আসতে বলেন তাকে। কিন্তু ওই শিক্ষকের নাম তিনি জানেন না বলে শিক্ষার্থীদের জানান।
[১০] প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, পরে ছবি দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মাজহারুল হাসান মজুমদারকে চিহ্নিত করে বলেন, তিনি জাহিদুরকে ওষুধ নিয়ে আসতে বলেছিলেন।
[১১] সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে সিকিউরিটি গার্ড জানান, রাত ১১টার দিকে তিনি ক্যাম্পাসে আসলে ওই শিক্ষকের দেখানো এক লোক জাহিদুরের কাছে একটি প্যাকেট দেন। সেই প্যাকেটের ভেতর একটি ফেনসিডিলের বোতল ছিল। তিনি যমুনা নামক একটি সিকিউরিটে কোম্পানির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় গার্ডের চাকরি করেন বলে জানান। আটকের সময় তার কাছে একটি আইডি কার্ডও পাওয়া যায়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জাহিদুরকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
[১২] এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মাজহারুল হাসান মজুমদারকে একাধিকবার কল-ম্যাসেজ দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
[১৩] শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের বাসভবনের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজ। আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে ওই গেস্ট হাউজে অভিযুক্ত শিক্ষক আটকা পড়েন। সেখানে গত কয়েকদিন ধরে অবস্থান করছিলেন ড. মাজহারুল হাসান। উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে তিনি পরিচত। তিনি মাদক গ্রহণ করেন বলে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ আছে।
[১৪] আন্দোলনরতদের অন্যতম মুখপাত্র মীর রানা বলেন, উপচার্যের নিজ বাসভবনের মেইন গেইটের সিকিউরিটি গার্ডই যখন ফেনসিডিল বাসায় নিতে গিয়ে ধরা পড়ে, তখন পুরো ক্যাম্পাসে মাদক চোরাচালানের দায়ভারও তাকেই নিতে হবে। আর যে শিক্ষকের (অধ্যাপক ড. মাজহারুল হাসান মজুমদার) জন্য এ ফেনসিডিল নিচ্ছিল সিকিউরিটি গার্ড, সে শিক্ষক ক্যাম্পাসে উপাচার্যের খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
আপনার মতামত লিখুন :