শিরোনাম
◈ ওসি নিয়োগে নতুন নীতিমালা: যোগ্যতা, স্বচ্ছতা ও সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ ◈ পুলিশে ফের বড় রদবদল ◈ সীমানা পুনর্বিন্যাসে ভাঙ্গায় সহিংসতা: থানাঘেরাও, গাড়ি ভাঙচুর ◈ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা ◈ প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটে কীভাবে ভোট দেবেন, জানালেন ইসি ◈ তারুণ্যের শক্তি আমাদের জাতির চালিকাশক্তি : প্রধান উপদেষ্টা ◈ দেশে নিবন্ধিত কোচিং সেন্টার ৬,৫৮৭, অনিয়ন্ত্রিত আরো বহু; নীতিমালা শূন্যতায় বাড়ছে বাণিজ্যিকীকরণ ◈ অনলাইন জুয়ার অর্থ লেনদেনে দুই অভিনেত্রী গোয়েন্দা নজরে ◈ রাবি হল সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ৩৯ প্রার্থী ◈ জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে যেভাবে ধরা পড়ল ৫০ প্রতারক! (ভিডিও)

প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারী, ২০২২, ০৬:৩০ সকাল
আপডেট : ২৩ জানুয়ারী, ২০২২, ০৬:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সাগরদ্বীপে অন্যরকম উন্নয়নযুদ্ধ: প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৬৮ প্রকল্প চলমান

নিউজ ডেস্ক: দ্বীপের চারদিকে সাজসাজ রব। এ এক অন্যরকম উন্নয়নের যুদ্ধ! দেশি-বিদেশি প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৬৮টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। দিনে দিনে পাল্টে যাচ্ছে মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমার ছড়া, মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, উত্তর নলবিলা, কোহেলিয়া নদীতীর ছাড়িয়ে পাশর্^বর্তী পেকুয়া পর্যন্ত। এ মাথা থেকে ওই মাথা। সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগাপ্রকল্পের অন্যতম মহেশখালী-মাতারবাড়ী। প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি হতে যাচ্ছে এ বছরেই। বাস্তবায়ন হবে ধাপে ধাপে চলতি ২০২২ থেকে ২০২৫ সালে। শুধু চট্টগ্রাম-কক্সবাজারবাসীই নয়; প্রকল্পগুলোর সুফল পাবে দেশ ও জাতি। কক্সবাজারে পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণ, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সম্পন্ন, সোনাদিয়ায় বিশেষায়িত পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্র ও মেরিন পার্ক প্রতিষ্ঠিত হলে কক্সবাজার হবে পর্যটন ও অর্থনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় নয়া আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

বঙ্গোপসাগরের কিনারা ঘেঁষে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ৩৮৮ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সাগরদ্বীপ মহেশখালী। খাড়াখাড়ি উঁচু আদিনাথ পাহাড় ও ঢালুভূমি হয়ে সমুদ্র উপকূল। নয়ন জুড়ানো দেশের একমাত্র পাহাড়িয়া দ্বীপ মহেশখালী। অনন্য ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে এটি অপার সম্ভাবনাময়। উন্নয়নের গেটওয়েতে পরিণত হতে চলেছে মহেশখালী। ২০১০ সাল থেকে জাপানের কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতায় ‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ (বিগ-বি ইনিশিয়েটিভ)’ উদ্যোগের আওতায় মহেশখালীতে উন্নয়নযজ্ঞ এগিয়ে চলেছে। শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগকারী এবং আগ্রহ প্রকাশকারী দেশগুলো হচ্ছে- জাপান, চীন, জার্মানী, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, থাইল্যান্ড। তাছাড়া দেশ-বিদেশের শিল্প-জায়ান্টরা মহেশখালী-মাতারবাড়ীতে বিনিয়োগে আগ্রহ ব্যক্ত করছেন।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের ২৩টি, জ্বালানি বিভাগের ৬টি, ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প দু’টি, এলপিজি প্রকল্প দু’টি, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৯টি, সড়ক ও সেতু বিভাগের ৮টি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ৭টি শিল্পজোন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৯টি প্রকল্প, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দু’টি, আইটি সিটি, স্যাটেলাইট টাউন প্রকল্প ছাড়াও অনেকগুলো নিয়মিত ও সহায়ক প্রকল্প রয়েছে। এরমধ্যে জাপানী সহায়তায় ১২টি ইউনিটে বিদ্যুৎপ্রকল্প এবং মাতারবাড়ী বহুমুখী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেই ব্যয় হচ্ছে প্রায় সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা। সম্প্রতি প্রকল্পে যুক্ত শতাধিক দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।

গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা করছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা। দেশীয় সংস্থা ও কোম্পানির মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), পেট্রোবাংলা, পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুৎ বিভাগ, পর্যটন কর্পোরেশন, টিকে গ্রুপ, মীর আখতার ইত্যাদি। বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী বিনিয়োগ-শিল্পায়নে আগ্রহী। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি নিশ্চিত করতে মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন দুটি ইউনিটে ১২শ’ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎপ্রকল্পের জাইকার ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকাসহ মোট ব্যয় হচ্ছে ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। তবে গোড়াতে ব্যয় ধরা হয় ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। ১২টি ইউনিটে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে ব্যয় হবে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা। অধিকাংশ প্রকল্পে সংশোধিত ব্যয় বাড়ছে। বাড়ছে সময়ও।

মহেশখালীর বিভিন্ন অংশে গৃহীত মেগাপ্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ও ডাবল পাইপ লাইনসহ জ্বালানি তেলের ডিপো, ৭টি অর্থনৈতিক জোন, বহুমুখী সুবিধা সম্পন্ন সমুদ্রবন্দর, ট্যুরিজম পার্কসহ বিশেষায়িত পর্যটন কেন্দ্র, ৬ লেইন ও চার লেইন সড়ক, রেলপথ, বায়ু বিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষায় সুপার ডাইকযুক্ত (বেড়িবাঁধ কাম মেরিন সড়ক) নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) করা হচ্ছে। বেজা বলেছে, প্রকল্পের নেহাৎ প্রয়োজনে পাহাড় কাটা ও গাছ কাটার বিপরীতে দ্বিগুণ বৃক্ষরোপণ করা হবে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় বন বিভাগ দ্বীপে লাগসই বৃক্ষ রোপণ শুরু করেছে।

মেগাপ্রকল্প ও অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মহেশখালীতে ১৯ হাজার ৭১৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরো জমি অধিগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। লিজ, বন্দোবস্তির জমি প্রায় সাড়ে ১২ হাজার একর। সেখানে নির্মিত হচ্ছে- মাতারবাড়ি দু’টি ইউনিটে ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, কালামার ছড়া-হোয়ানকে ১৩,৫৬০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ ও এলএনজি স্টেশন, গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন, ধলঘাটা-কালামার ছড়ায় জ¦ালানি তেল সরবরাহে এসপিএম প্রকল্প, ধলঘাটায় অর্থনৈতিক অঞ্চল, কালামার ছড়া-ইউনুছখালী-জাফুয়ায় যৌথ উদ্যোগে ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎপ্রকল্প ইত্যাদি।

এসব প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের মাঝে আগে নানা ধরনের আশঙ্কা থাকলেও এখন তা কেটে যাচ্ছে। প্রকল্প বহরের জন্য জমির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় মহেশখালীতে জমির মূল্য বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। তবে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণের টাকা বিতরণে গড়িমসি, হয়রানি, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এখনো মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের এল, এ, শাখায় গণহয়রানির অহরহ অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। কিছু এলাকাবাসীর মাঝে নেতিবাচক মনোভাবও দেখা গেছে। তাদের মতে, এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বাপদাদা চৌদ্দ গোষ্ঠির ভিটেবাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। এলাকার উন্নয়ন হলেও তারা তো আর পৈত্রিক ভিটেমাটিতে থাকবেন না। প্রকল্পের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে যারা জমি দিয়েছেন তারা সরাসরি সুফল পাবেন- এমন সৌভাগ্য হবে ক’জনার?

ইনকিলাব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়