মনিরুল ইসলাম: [২] একাদশ জাতীয় সংসদের গত ৩ বছরে ২০ সংসদ মারা গেছেন। এর মধ্যে ৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন মহামারি করোনায়। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৮ জনই আওয়ামী লীগের সংসদ সদসয় । দুজন অন্যান্য দলের।
[৩] মঙ্গলবার ১৫ তম অধিবেশন চলাকালে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের টানা চারবারের সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন মারা গেলেন।
[৪] এই স্বল্প সময়ে এতজন সংসদ সদস্যকে হারিয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের নেতারা। সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর কারণে তাদের শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
[৫] সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখা সূত্র জানায়, নির্বাচনের পরপরই আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম (কিশোরগঞ্জ-১) মারা যান। তিনি চলতি সংসদের একটি অধিবেশনেও যোগ দিতে পারেননি। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি মারা যান। এমনকি এমপি হিসেবে শপথও নেননি তিনি। তবে এমপি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন।
[৬] তার মৃত্যুতে সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম কার্যদিবসে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, সৈয়দ আশরাফ অত্যন্ত সৎ ও মেধাবী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ মেধাসম্পন্ন নেতা ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি আমার পরিবারের সদস্যদের মতো ছিলেন, আমাকে বড় বোনের মতো শ্রদ্ধা করতেন। তাকে নিজের ভাইয়ের মতোই দেখতাম।
[৭] এছাড়া একই বছরের ৯ জুলাই আওয়ামী লীগের রুশেমা বেগম (মহিলা আসন-৩৪), ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (রংপুর-৩) মারা যান।
[৮] এছাড়া ওই বছরের ৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল (চট্টগ্রাম-৮), ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের মো. ইউনুস আলী সরকার (গাইবান্ধা-৩) মারা যান।
[৯] ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি মারা যান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হোসেন (বাগেরহাট-৪), ১৮ জানুয়ারি আব্দুল মান্নান (বগুড়া-১), ২১ জানুয়ারি ইসমাত আরা সাদেক (যশোর-৬), ২ এপ্রিল ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু (পাবনা-৪, আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী), ৬ মে হাবিবুর রহমান মোল্লা (ঢাকা-৫, ডেমরা-দনিয়া-মাতুয়াইল)। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ জুন মারা যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম (সিরাজগঞ্জ-১, কাজিপুর), ১০ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন (ঢাকা-১৮) ও ২৭ জুলাই ইসরাফিল আলম (নওগাঁ-৬)।
[১০] একের পর এক সংসদ সদস্য মারা যাওয়ায় জুনে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব দুঃখজনক…আসলে আমার জন্য খুব কষ্টকর হচ্ছে বলতে, এভাবে সবাইকে হারানো খুবই দুঃখজনক।’
[১১] প্রাণঘাতী করোনায় আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ (এমপি নন) মারা যাওয়ায় সংসদে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বার বার তিনি চোখ মোছেন।
[১২] ২০২১ সালে যাদের মৃত্যু হয়েছে- মো. একাব্বর হোসেন ছাড়াও গত ১১ মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। ৪ এপ্রিল মারা যান ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক। ১৪ এপ্রিল মারা যান সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু। ৩০ জুলাই মারা যান কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ, ২ সেপ্টেম্বর মারা যান সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।
[১৩] এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক সংসদ সদস্য। তবে তাদের বেশিরভাগ সুস্থ হয়ে উঠলেও ঘাতক করোনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বর্তমান সংসদের ৫ সদস্যের। সংসদ সদস্যদের মধ্যে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। এরপর মারা যান নওগাঁ-৬ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম। করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিলেট-৩ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। এছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু ও সর্বশেষ জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু করোনায় মারা যান।