শারফিন শাহ
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ও ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথমদিকে থাকেন এবং এই বিষয়টা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক প্রবলভাবে আহত হন। একজন অধ্যাপক বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি উচ্চতর মাদ্রাসায় রূপ নিয়েছে, এখানে ভর্তিকৃত মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দু’লাইন ইংরেজি শুদ্ধ করে লিখতে পারে না ইত্যাদি। প্রথমত: মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলতে এখানে যা বোঝানো হয় তা মৌলিক মাদ্রাসা শিক্ষা নয়। এই মাদ্রাসা শিক্ষা মূলত মূলধারার শিক্ষার সঙ্গেই সম্পৃক্ত। এখানকার সিলেবাস আর মূলধারার সিলেবাস একরকম। শুধু ব্যবসায় শাখা নেই। এসএসসি ও এইচএসসিতে যা পড়ানো হয় এখানেও তাই, শুধু পরীক্ষাটা হয় দাখিল ও আলিম নামে। তাছাড়া আরবি, কোরআন, হাদিস প্রভৃতি তাদের বাড়তি অর্জন বলা যায়। তাই এই শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ আধুনিক ও যুগোপযোগী। দ্বিতীয়ত: মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অনেকেই কোরআন মুখস্থ করে, কওমি শেষ করে, জীবনের ২৫ বছর অতিক্রান্ত করে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। স্বভাবতই তাদের পড়া বুঝা ও ধারণক্ষমতা বেশি থাকে, তাই তারা এগিয়ে থাকে। তবে বিজ্ঞান শিক্ষায় বিশ্লেষণ ও বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষণ থাকায় এই শাখায় তারা স্বভাবতই অকৃতকার্য হয়।
তৃতীয়ত: ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সব শর্ত পালন করেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন, তারপরও যদি তাদের দুর্বলতা থাকে তবে বুঝতে হবে, ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও দুর্বলতা আছে। মুখস্থ বিদ্যানির্ভর ভর্তি পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বের না হতে পারলে এমনটাই হবে। চতুর্থত: মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা শুধু নয়, মূলধারার শিক্ষার্থীরাও ইংরেজি পারেন এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। নীলক্ষেতের কোচিং সেন্টারগুলোতে জরিপ করলে দেখা যাবে, সেখানে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা অনেকেই ইংরেজি শিখতে ভর্তি হয়েছে! পঞ্চমত: কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলেই তিনি সবকিছুই পেয়ে গেলেন এমন নয়। বিগত দশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় ভালো করেছেন, বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ভালো করেছেন, গবেষণা করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন এমনটা চোখে পড়েনি। জাতীয় জীবনে তাদের অবদান শূন্যের কাছাকাছি।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গোড়া থেকেই গলদযুক্ত। সৃজনশীলতা বলতে কিছু নেই। আগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও সর্বত্র সাফল্যের পতাকা উড়িয়েছেন। বিজ্ঞানী ড. কুদরত ই খোদা, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী আবুল ফজল, ভাষাবিদ মুহম্মদ আবদুল হাই, শহীদ বুদ্ধিজীবী রাশীদুল হাসান, শহীদ বুদ্ধিজীবী ও লেখক আনোয়ার পাশা, কথাশিল্পী শওকত ওসমানসহ আরও বহু গুণী মানুষ মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছিলেন। এখন যারা মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তারা এসব মানুষদের রচনাবলি ছুঁয়েও দেখেন কিনা সন্দেহ, উল্টো তাদের নাস্তিক, প্রগতিশীল বলে গালি ছুড়েন।
বাংলাদেশে জ্ঞানচর্চা ও পড়াশোনা করতে হয় সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে। এখানে প্রতিষ্ঠানের ভ‚মিকা শুধুমাত্র সনদপত্র দেওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তাই কে প্রথম, কে দ্বিতীয়, কে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তা দিয়েও মেধার পরিমাপ করা অর্থহীন। লেখক ও গবেষক