শওগাত আলী সাগর: [১] ছয়টা বাজার আগেই এতোগুলো মানুষ এসে জমায়েত হবে- সেটা ভাবনায় ছিলো না। কিন্তু কী আশ্চর্য! কোভিড পরবর্তী (এখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি) এটিই প্রথম কোনো প্রতিবাদী কর্মসূচি। সেই কর্মসূচিকে হতাশ করেননি টরন্টোর সচেতন মানুষগুলো। স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে এসে শামিল হয়েছেন- বাংলাদেশের সংঘটিত ঘৃণ্য সাম্প্রদাযিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আয়োজনে। যারা এসেছেন- তাদের চোখেমুখে ষ্পষ্ট ছিলো বেদনা, ক্ষোভ আর তীব্র ঘৃণা। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, বিচারহীনতার বিরুদ্ধে, দোষারোপেরর রাজনীতির নামে ঘৃণ্য অপরাধপ্রবণতাকে, অপরাধীদের আড়াল করার তৎপরতার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আর ঘৃণা যুগপৎ প্রকাশ পাচ্ছিলো যেন।
[২] ডেনফোর্থের এই জায়গাটায় আমরা কতোবার যে দাঁড়িয়েছি। যুদ্ধাপরাধীরের বিচারের দাবিতে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে, লুটেরা বিরোধী আন্দোলনে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বধ বন্ধের দাবিতে । ঘরোয়া থেকে নিশিথা ফ্রেশ ফুডস হয়ে সুইস বেকারির সামনের এই জায়গাটা যেন আমাদের প্রতিবাদ জানানোর প্ল্যাটফরম হয়ে ওঠেছে। প্রতিবার কোনো দাবি নিয়ে ডেনফোর্থে দাঁড়ানোর সময়েই মনে হয়েছে- এ নিয়ে আর যেন আমাদের দাঁড়াতে না হয়। তবু সম্প্রতি বিকেল- সন্ধ্যায় আমাদের ডেনফোর্থে দাঁড়াতে হয়েছে, প্ল্যাকার্ড হাতে, ব্যানার নিয়ে, প্রতিবাদের ¯েøাগান বুকে ঝুলিয়ে আমাদের রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে।
[৩] দুর্গাপূজায় বাংলাদেশের মন্দিরে মন্দিরে হামলা, হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষই অস্তির হয়ে পড়েছিলো। সেই অস্থিরতার ধাক্কা এসে লাগে এই প্রবাসেও ‘এই শহরে কেউ কী প্রতিবাদ করবে না? কেউ কিছু করছে না কেন!’- প্রতিদিন অসংখ্যবার এই একটিমাত্র প্রশ্ন নিয়েই বারবার ফোন করতে থাকে -আজিমউদ্দিন আহমেদ। আজিম- আমাদের বন্ধু, চাকসুর সাবেক জিএস। ‘নিশ্চয়ই প্রতিবাদ হবে, হবে অবশ্যই’- এই আশ্বাসবাণীতে আজিম শান্ত হয় না। টের পাই- তিনি নানাজনকে ফোন করতে শুরু করেছেন। ডেনফোর্থে মানববন্ধনের কর্মসূচি চ‚ড়ান্ত হয়ে গেছে। এর মাঝে টরন্টো ফিল্ম ফোরাম, পিডিআই, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী অব কানাডা, আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ঘোষণা করে। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে টরন্টোয় নানা সংগঠনের চারদিনের কর্মসূচি ঘোষিত হয়ে যায়।
[৪] দুটো কর্মসূচিতেই আজ অংশ নিয়েছিলাম। প্রিয় জন্মভ‚মি বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষগুলোর প্রতি সহমর্মিতা জানাতে, তাদের হয়ে, তাদের প্রতি যে অন্যায়-অবিচার করা হচ্ছে- তার প্রতিবাদ জানাতে, বাংলাদেশের প্রতিবাদী মানুষগুলোর সঙ্গে সংহতি জানাতে টরন্টোয় মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি আমি। টরন্টোর প্রতিবাদী মানুষগুলোর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আমিও উচ্চারণ করেছি- বাংলাদেশে দুর্বৃত্তরা শাস্তি পাক, সরকার তার সক্ষমতা দেখাক। লেখক : কানাডা প্রবাসী সাংবাদিক