ইশরাত জাহান ঊর্মি: বড় হলে কি উৎসব হারিয়ে যায়? মনে হয় যায়। বড় হলে নিজের পছন্দমতো সাজপোশাক থাকে, কিছু স্বাধীনতা থাকে কিন্তু উৎসবের আনন্দটা নানা স্ট্রেসে হারিয়ে যায়। পূজা এমন তীব্র স্মৃতি জাগানিয়া উৎসব! সারাটাজীবন আমার শৈশবের শরৎকালের ওই দিনকটা মনে থাকবে। বাতাসে কীভাবে পূজা পূজা গন্ধ পাওয়া যায় তা অনেকবার ব্যাখ্যা করেছি- করে গালি খেয়েছি, আমারে লাত্থি মেরে ইন্ডিয়া পাঠানো হবে বলেছে (ইন্ডিয়ার কোন স্টেটে লাত্থি মেরে পাঠাবে যদি বলতো তো ভালো হতো, কেরালা হলে ভালো হয়, যাইনি, যাওয়ার শখ আছে) আমি মুসলমানের মেয়ে হয়ে কেমনে পূজা নিয়ে উদ্বেলিত হই, আমারে পাছার মধ্যে মারা উচিত- বলছে। কিন্তু যাই বলুক, পূজার গন্ধ কিন্তু আসলেই পাওয়া যায়। অপরূপ বাংলার স্বকীয় শরৎ।
পূজা এলে সারাদিন মাইকে বাজতো মধু মালতী ডাকে আয়..., প্রবীর মামার মা সাহা নানু নাড়ু পাঠাতো, গৌতমদাদের বাড়ি লাবড়া- খিচুড়ি, তখন প্রতিমাদের মালা শাড়ি পরানো হতো। দুর্গা সিঁদুর লাল, ল²ী রয়্যাল ব, সরস্বতী সবুজ বা গোলাপি। ছেলেদের পোশাক অতো কালারফুল না, তবে অসুরের কফিরঙা শরীর দারুণ ছিলো, আনন্দের সঙ্গে একটা উদাসী বিরহী বাতাস বইতো। আমরা ‘মুসলমানের মেয়ে’ ছিলাম বটে, কিন্তু ওই ক’টা দিন পড়ার টেবিলে মন বসতো না। আম্মু রিলাকটেন্ট হয়ে পড়তো। রাগ রাগ মুখে বলতো, ‘এই কয়দিন তো আর পড়াশোনা হবে না, সকালবেলাটা অন্তত কিছু পড়া শেষ করে রাখো’ যতোই রাগ রাগ করুক বোঝা যেতো যে তার মনের ভেতরও কোথাও একটা বাদ্যি বেজেছে।
এখন আই ফিল বেসড যে আমরা এরকম বাবা-মা পেয়েছিলাম, যারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে শেখাননি, যারা ধর্ম দিয়ে মানুষের পরিচয় শেখাননি, যারা ধর্মীয় উৎসবকে উৎসব হিসেবেই দেখেছেন। এখন নহলীর কাছে গল্প শুনি, তার কোনো সহপাঠীরা ঢাকের আওয়াজ শুনলে পাপ হবে বলে পূজার কয়দিন ঘর থেকে বের হয় না! এসব শিশুদের বাবা-মা কি শিখিয়ে কোনো সমাজ তৈরি করছেন, ধর্মের যে গর্ত তিনি খুঁড়ছেন সেই গর্তে যে তিনি নিজেও পড়বেন না, তার কোনো গ্যারান্টি কি আছে? শৈশব তো হারিয়েই গেছে সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সহজ স্বাভাবিক বিবেকবোধও হারিয়ে গেছে। পূজা এলে তাই এখন প্রতিমা ভাঙার শব্দই বেশি পাই, ইমপোজ করা নানা আলো আর কথার বাগাড়ম্বরে উৎসবটা সত্যিই আর পাওয়া যায় না। হতাশ লাগে আমার। (জ্বর নিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবছিলাম)। Israt Zahan Urimi-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।