অপূর্ব চৌধুরী: [২] ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাশের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের অবকাঠামোতে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) । কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা, আবাসন ও অবকাঠামো সংকট প্রকট থাকায় শিক্ষার্থীরা হলের দাবিতে আন্দোলন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যাধুনিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার ঘোষণা দেন ।
[৩] এরপর ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন: ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন' প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক সভা। পরের বছর ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের নকশা দেখেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন ক্যাম্পাসের প্রাথমিক প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৯২০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
[৪] শনিবার (৯ অক্টোবর) এ প্রকল্প অনুমোদনের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। তবে তিন বছরে শুধু জমি অধিগ্রহণেই আটকে আছে প্রকল্পটির কাজ। তাই নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
[৫] বর্তমানে প্রকল্পের প্রায় ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ শেষসহ আরও ১২ একর অধিগ্রহণের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর, পরিকল্পনা ও প্রকৌশল ভবন নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, হ্রদ খনন, পুকুর খনন, ঘাট নির্মাণ, সংযোগ সেতু নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ সারফেস ড্রেন নির্মাণ ও মাস্টারপ্ল্যানের কাজ করার কথা রয়েছে।
[৬] এদিকে কাজের আর কোন অগ্রগতি না হওয়ার কারণ হিসেবে করোনা মহামারীকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতিমধ্যেই প্রাচীর নির্মাণের জন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
[৭] বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের প্রাথমিক এ প্রকল্পটির বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
[৮] নতুন ক্যাম্পাসের কাজের বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ক্যাম্পাসের ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণসহ বাকি ১২ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। প্রাচীর নির্মাণসহ বাকি উন্নয়নমূলক কাজ প্রক্রিয়াধীন। প্রত্যাশা করছি নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে।
[৯] বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের অত্যাধুনিক ক্যাম্পাস হবে জবির নতুন ক্যাম্পাস। দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন হয়ে আমাদের ছাত্রদের হল, মাঠসহ যত সমস্যা রয়েছে তা সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
[১০] শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নূরে আলম আব্দুল্লাহ বলেন, করোনার জন্যসহ বেশকিছু কারণে কাজ একটু পিছিয়ে পড়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। বর্তমান উপাচার্য স্যারের সাথে আমরা এ বিষয়ে কথা বলেছি। দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন।
[১১] নতুন ক্যাম্পাসের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আবেদনের ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে নতুন ক্যাম্পাস করে দিচ্ছেন। নতুন ক্যাম্পাস হলে শিক্ষার্থীদের মাঠ, হলসহ সকল সমস্যা দূর হবে। কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। উনি আমাদেরকে দ্রুত কাজ বাস্তবায়নের আশা দিয়েছেন।
[১২] বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সহ-সভাপতি সুমাইয়া সোমা বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বার বার পরিবর্তন করা হচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ ছাড়া কিছুই হয়নি। কাজ কেন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। দ্রুত ক্যাম্পাস প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের সমস্যা দূর হতো।