রাজিয়া সুলতানা জেনি : চরকিতে সম্প্রতি রিলিজ হওয়া অমিতাভ রেজা পরিচালিত সিনেমা ‘মুন্সিগিরি’ দেখলাম। বেশ ভালো স্টার কাস্ট। চঞ্চল চৌধুরী, পূর্ণিমা, শবনম ফারিয়া। শুরু একটা মৃত দেহ দিয়ে। সো, বুঝতে বাকি থাকে না, একটা মার্ডার থ্রিলার উপভোগ করতে যাচ্ছি। সিটবেল্ট শক্ত করে বেঁধে নিলাম। শুরুটা দুর্দান্ত। রেললাইনে পড়ে থাকা মৃতদেহ, পুলিশের আগমন, কোনো ক্লু নেই, এমন একজন মানুষকে মেরে ফেলার আপাত কোনো কারণও নেই। শুধু একটাই কাকতালীয় ব্যাপার, ইমতিয়াজ মির্জার লেখা একটা উপন্যাসে, প্রথম সিনে, একইভাবে একজন খুন হয়। ফলে সন্দেহের তীর তাঁর দিকে ঘুরে যায়।
ওদিকে কেসটার তদন্তকারী অফিসার ট্রেনিংয়ে বিদেশে যাওয়ায় কেসটা আসে এসিপি মাসুদ মুন্সির কাছে এবং মূলত এরপর থেকে কাহিনি শুরু হয়। কীভাবে মাসুদ মুন্সি এই খুনের সুরাহা করে, সেটাই এই সিনেমার গল্প। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিনেমাটা দেখে আমার অনুভূতি কী? এটাকে ভালো, খারাপ, অ্যাভারেজÑ কোন ক্যাটাগরিতে ফেলবো। অনেস্টলি স্পিকিং, ইট ইজ অ্যা মিক্সচার অফ ভালো অ্যাভারেজ অ্যান্ড খারাপ। যেমন শুরুটা দুর্দান্ত। একইসাথে দর্শককে আটকে দেয়। আগ্রহ তৈরি করে এবং দারুণ থ্রিলিং একটা গল্পের প্রত্যাশা তৈরি করে।
এরপরে? এরপরে আসে নায়ক মাসুদ মুন্সির ক্যারেক্টার স্ট্যাআব্লিস করার কাজ। সেটাও সাবলীলভাবে এগিয়ে যায়। একজন অপরাধীকে ধরতে গিয়ে আহত হওয়া, আধুনিক টেকনোলোজির সাহায্য না নেওয়ার জেদ, অফিস পলিটিক্স এসব খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন হয়। মাসুদ মুন্সির ব্যক্তিগত জীবন, তাঁর ইন্টারোগেট করার টেকনিক, তাঁর টিম এসব সম্পর্কেও ধীরে ধীরে জানতে পারি। এরপর থেকে কাহিনী অতিমাত্রায় সঙ্কুচিত করে ফেলা হয়। মূল উপন্যাসটি পড়িনি, তাই বলতে পারছি না, কারণটা। লেখকই ডিটেইলে যাননি, না চিত্রনাট্যকারের কাজ এটা।
অফিস পলিটিক্সের কোনো ফলোআপ নেই। হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ভ্যানিশ হয়ে যায়। এমনটা হতেই পারে। গল্পকার ডেভিয়েট করতে চাননি, কিন্তু তেমন হলে, এটা শুরু করারই কোন যৌক্তিকতা ছিল না। হয়, অফিস পলিটিক্স নিয়ে ছোট সুন্দর একটা সাবপ্লট রাখুন, আর নয়তো একেবারেই রেখেন না। কেসটা কীভাবে মাসুদ মুন্সির কাছে এলো, সেটা বোঝানোর অনেক উপায় ছিল। অযথা একটা সিনের জন্য অফিস পলিটিক্স ঢোকানো কেমন যেন লেগেছে।
অতি সংক্ষিপ্তকরণ ব্যাপারটা এরপর থেকে পুরো সিনেমা জুড়েই ছিল। যিনি মারা যান, তাঁর অতীত জীবন একেবারেই নাই। ফলে এই চরিত্রটার জন্য কোন ধরনের অনুভূতিই তৈরি হয় না। কেবল গল্পের মাধ্যমে জানানো হয়, তিনি বউ পেটাতেন, ঘুষ খেতেন, অনেক বাড়ি আছে ইত্যাদি। একটু ভিলেনিক টাচ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো সিন নেই। কেন? নট সিওর। তবে ব্যাপারটা সিনেমাটাকে দুর্বল করে দিয়েছে।
এই একই অভিযোগ খাটে তদন্তের ক্ষেত্রেও। একটা ক্লু পাওয়া কেবল দেখানো হয়। এছাড়া কি চিন্তা করছে ইনভেস্টিগেটিং অফিসার, কোন ক্লু তাঁকে কি চিন্তা করাচ্ছে, সেটা দর্শকের কাছে দুর্বোধ্য রাখা হয়েছে। ডিটেকটিভ গল্পে কিছু ব্যাপার অবশ্যই দর্শককে জানানো হয় না, কিন্তু একেবারে অন্ধকারেও রাখা হয় না। ঠিক পথে হোক আর ভুল পথে হোক, এ ধরনের গল্পে দর্শককে ইনভল্ভ করানো হয়, দ্যাট পার্ট ওয়াজ মিসিং।
এনিওয়ে, অভিনয় ব্রিলিয়ান্ট ছিল। চিত্রনাট্য কম্প্যাক্ট ছিল। সম্প্রতি দেখা বেশকিছু ওয়েব সিরিজে যেভাবে কাহিনি স্ট্রেচ করা হয়েছে, পাঁচ পর্বে শেষ করা সম্ভব গল্পকে যেভাবে আট পর্বে টেনেছে, সে ধরনের ঘটনা এখানে ঘটেনি ঠিকই। তবে উল্টোটা হয়েছে। দুই ঘণ্টার সিনেমাকে দেড় ঘণ্টার বানাতে গিয়ে বেশ কিছু সাবপ্লটকে ছাঁটাই করা হয়েছে। বাজেট কিংবা আইডিয়ার অভাব, কারণ যা ই হোক, ব্যাপারটা সিনেমাটাকে দুর্বল করেছে।
ডিরেকশান, ক্যামেরা ওয়ার্ক ভালো লেগেছে। সিনেমাটা সিকুয়েল এর দাবি রাখে। নো ডাউট, উই মিস অ্যা বাংলাদেশি শার্লক হোমস। দেখা যাব, প্রোডাকশান টিমের কী প্ল্যান। আপাতত সিনেমাটার জন্য শুভেচ্ছা।