নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ছাড়াও আরও ১০টি দেশে ইলিশ উৎপাদন হয়। কিন্তু অন্য কোনো দেশে মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় জেলেদের ভিজিএফ, আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় না। ওইসব দেশে মা ইলিশ ও জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় খোদ জেলেরাই তা প্রতিরোধ করে। কিন্তু বাংলাদেশে হয় তার উলটো- জেলেরা নানা সুবিধা পেয়েও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কৌশলে মা ইলিশ ও জাটকা ধরছে। যুগান্তর
নৌপুলিশ বলছে, জনবলের অভাবে নিষেধাজ্ঞার সময় পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তবু নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযানে শত শত মণ জাটকা ধরার জাল, উপকরণসহ জেলেদের আটক করা হচ্ছে।
তারপরও থামছে না মা ইলিশ ও জাটকা নিধন। এজন্য জেলে ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করার বিকল্প নেই।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে সরাসরি ইলিশ মাছ আহরণের সঙ্গে জড়িত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ জেলে। এ খাতে পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। জেলেদের সহায়তায় সরকার ভিজিএফসহ নানা সুবিধা দিয়ে আসছে। প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। ওই সময়ে প্রায় ৬০ হাজার জেলে পরিবারকে ৮৭ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।
এছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। ওই সময়ের মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪ মাস ৪০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়। গত বছর ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯৬ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল ও খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন মা ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। এ সময়ও জেলেদের সহায়তা দেওয়া হয়। গত বছর প্রায় ৫ লাখ জেলে পরিবারকে ১০ হাজার ৫৬৬ টন চাল দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছর ২২ দিন (৪ থেকে ২৫ অক্টোবর) ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৮৮টি জেলে পরিবারকে ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌপুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নদী কিংবা সাগরে মা ইলিশ-জাটকা প্রতিরোধে তাদের লোকবল (নৌপুলিশ) স্বল্পতা রয়েছে। জেলেরা নানা কৌশলে দিনের পর দিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরছে। হাজার হাজার মিটার কারেন্ট জাল, টনের পর টন জাটকা জব্দ এবং শত শত জেলেদের আটক করা হলেও নিষেধাজ্ঞা সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
১৬ মার্চ চাঁদপুর মেঘনা এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরার সময় জেলেদের আটক করে নৌপুলিশ। ওই সময় জেলেরা হামলা চালায় নৌপুলিশের ওপর। পরে সংঘর্ষে এক জেলে নিহত হয়। ১১ মার্চ চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার অভয়াশ্রমে মাছ শিকারের অপরাধে ২২ জন জেলেকে আটক করা হয়। সঙ্গে ১৫ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়। একইদিন জেলার নীলকমল এলাকায় আরও ৫ জেলেকে আটক করা হয়। ২৮ জানুয়ারি বরিশালে দুটি পৃথক অভিযানে প্রায় ৬ হাজার কেজি জাটকা আটক করা হয়। গত বছরের ২৮ আগস্ট রাজবাড়ীতে ২৯ জেলেকে বিপুল পরিমাণ জাটকা ও অবৈধ জালসহ আটক করা হয়।
এ বিষয়ে নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, নৌপুলিশ দিন-রাত কাজ করছে। আমাদের সীমিত জলবল দিয়ে জেলা পুলিশের সমন্বয়ে অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু তারপরও জাটকা-মা ইলিশ ধরা বন্ধ হচ্ছে না। আমরা এখন কৌশল পালটে জেলে সমাজ, জেলেপল্লিতে সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, সরকার তাদের পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। তারপরও জেলেরা জেল জরিমানা উপেক্ষা করে নদী-সাগরে নামছে। আমরা মনে করি সাধারণ মানুষ যদি এর বিরুদ্ধে থাকে তাহলেই ইলিশ রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ সফল হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ জানান, পৃথিবীর কোনো দেশে জেলেদের এত পরিমাণ সহায়তা প্রদান করা হয় না। নিষেধাজ্ঞা সময়টুকুতে যাতে ইলিশ ধরা না হয় তার জন্য টনের পর টন চাল, খাদ্যসামগ্রীসহ নানাভাবে জেলে-জেলে পরিবারগুলোকে সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে। জাটকা কিংবা মা ইলিশ না খেলেই হয়-এসব যারা ধরে তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেই নদী-সাগর ইলিশে সয়লাব হয়ে যাবে।