শিরোনাম
◈ তীব্র তাপদাহে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত গণবিরোধী: বিএনপি ◈ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় কাজ করবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী ◈ বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে: ওবায়দুল কাদের ◈ উপজেলা নির্বাচনে হার্ডলাইনে বিএনপি, ৭৩ নেতা বহিষ্কার ◈ যুদ্ধ বন্ধের শর্তেই ইসরায়েলি জিম্মিদের ছাড়বে হামাস ◈ হরলিক্স আর স্বাস্থ্যকর পানীয় নয়  ◈ বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী ◈ যে কোনো ভিসাধারী পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারবেন  ◈ পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফে'র গুলিতে বাংলাদেশি নিহত

প্রকাশিত : ০৭ জুলাই, ২০২১, ০৩:৪৬ রাত
আপডেট : ০৭ জুলাই, ২০২১, ০৩:৪৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আতিক খান: মানুষ বাঁচাতে আইসিইউ’র চেয়েও বেশি প্রয়োজন হাইফ্লোন্যাজাল ক্যানুলা

আতিক খান: গত বছরের প্রথম ঢেউয়ে এভারেজ আক্রান্তের সর্বোচ্চ হার ছিলো ৪ হাজারের আশপাশে। এখন তার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। গত এক সপ্তাহে আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সার্কেলেই জানামতে অন্তত ৫টা পরিবার আক্রান্ত হয়েছে। বন্ধু আর পরিচিত সার্কেল ধরলে এই সংখ্যা কয়েকগুণ। তাদের বেশ কয়েকজনেরই অক্সিজেন প্রয়োজন হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বেশকিছু পরিবারেই আমরা অক্সিজেন সরবরাহ করেছি। সম্প্রতি অল্প কয়েকজন মারা গিয়েছে বেশ অল্প বয়সে। রহিম ভূঁইয়া নামে একজনের মৃত্যু বেশ দাগ কাটলো। অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি পাওয়া মেধাবী ৩০ বছরের ছেলেটা মাত্র ১ বছর আগে প্রথম বাবা হয়েছিলো। ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। মৃত্যু ১৬৪ জন, শনাক্ত হয়েছে ৯,৯৬৪ জন। শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ। আপনাকে মনে রাখতে হবে এটা সরকারি হিসাব, আর সবাই করোনা পরীক্ষা করেন না। যারা করেন না, তারা হিসাবের আওতায় আসেন না। সত্যিকার সংখ্যা এর ৩-৪ গুণ বেশিও হতে পারে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে খুলনা বিভাগে, ৫৫ জন। ঢাকায় মারা গেছে ৪৪ জন। সারাদেশে ১০০টি সরকারি হাসপাতাল করোনার জন্য নির্ধারিত আছে। এর মধ্যে ৪৮টিতে আইসিইউ আছে, ৫২টিতে নেই যার মধ্যে ৩৫টিই আবার ঢাকার বাইরে। সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় জেলা উপজেলাগুলো তাই ভয়াবহ সংকটে আছে। ঢাকার ১৬টি সরকারি কোভিড হাসপাতালের ৮টিতেই কোনো আইসিইউ বেড খালি নেই। বাকি আটটিতে সর্বোচ্চ ১-৫ টি আইসিইউ বেড খালি আছে। অক্সিজেন সংকটের কারণে সাতক্ষীরা ও বগুড়ায় মোট ১৭ জন করোনা রোগী মারা গেছেন। পাবনায়ও একজন মারা গেছেন রোববার। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ৩৫ জেলায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও সরবরাহ চেইনের সমস্যার জন্য বাকি জেলা এবং উপজেলাগুলোতে অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়েছে।

আইসিইউ’র চেয়েও বেশি প্রয়োজন হাইফ্লোন্যাজাল ক্যানুলা। আইসিইউতে রোগীকে নেয়া হয় শেষ পর্যায়ে। আগে যদি রোগীকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া যায় তাহলে আইসিইউ'র ওপর চাপ কমবে। আইসিইউতে যাওয়ার পর খুব কম রোগীই ফিরে আসেন। তাই রোগীকে যাতে আইসিইউতে না যেতে হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী গত বছরের জুনে একনেকের বৈঠকে দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট, ভেন্টিলেটর এবং হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এক বছরেও আমরা কেন সেই ব্যবস্থা করতে পারলাম না? আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বা বরাদ্দ তো কমেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আর অধিদপ্তর এক বছরে তাহলে কী কাজ করলো। এখন বলা হচ্ছে, সংক্রমণ আরেকটু বাড়লে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। গত দেড় বছরে স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির এতো অভিযোগের পরেও কেউ পদত্যাগ করেনি, কারও বিরুদ্ধেই সেরকম কোনো শাস্তির উদাহরণও তৈরি করতে দেখা যায়নি। সমন্বয়ের অভাবে লকডাউনের ঘোষণা নিয়ে গড়িমসি করাতেও লাখ লাখ মানুষ বেশ আগে-ভাগেই শহর হতে গ্রামে দলবেঁধে চলে গিয়েছে। যারা এখন মফস্বলেও সংক্রমণ বাড়াতে মুখ্য অবদান রাখছে।

এদিকে লকডাউন সাতকানিয়ার ইউএনও নজরুল ইসলাম ডাক্তার ডা. ফরহাদ কবিরের পরিচয় পেয়েও চেম্বারে যেতে না দিয়ে এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। দিয়েছেন জেলে ভরে দেওয়ার হুমকিও। স্বস্তির বিষয় হল তাকে ওএসডি করা হয়েছে। প্রশাসন যদি স্বাস্থ্যসেবার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় তাহলে মানুষ কীভাবে চিকিৎসা সেবা পাবে? এমনিতেই ডাক্তারদের কোনো আলাদা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। চীনে করোনা সংক্রমণ এর পরে অনেকে খুশি হয়েছিলো এবং বলেছিলো, মুসলিমদের করোনা হয় না। সবার হয়েছে এবং অনেক মুসলিম দেশও ভালোভাবেই আক্রান্ত হয়েছে। ভারতে সম্প্রতি অক্সিজেন সংকটে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার ভয়াবহ বৃদ্ধি পাওয়াতে অনেককেই উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া, শ্মশানে শত শত চিতা জ্বলার ভিডিওতেও অমানবিক সব মন্তব্য করতে দেখা গেছে দেশি ভাইদের। অথচ ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, অসংখ্য বর্ডার ভারতের সঙ্গে এবং এদেশেও ছড়িয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার ছিলো।

মানুষের বিপদে হাসলে সেই বিপদ একদিন নিজেদের ঘাড়েও পড়ে। দেশে সংক্রামিত হওয়া করোনার ৭৮ শতাংশই ভারতীয় প্যাটার্নের, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এখন দোয়া করেন যাতে আমাদেরও গণকবর খুঁড়তে না হয় আর নদীতে লাশ ভাসাতে না হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়