আনিস আলমগীর: বাংলাদেশের কওমিধারার মাদ্রাসা ছাত্রদের পশ্চাৎপদতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলাম। তাদের পক্ষে লিখেছি। কারণ অন্ধকারে পড়ে থাকা কাউকে অন্ধকারে রেখে আমাদের এগিয়ে যাওয়াকে প্রগতিশীলতা বলে না। অন্ধকারে পড়ে থাকা মানুষকে আলোয় আনা প্রগতিশীলদের কাজ। সারাদেশে ১৪ হাজার কওমি মাদরাসায় প্রায় ১৬ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এই কর্মঠ জনগোষ্ঠীকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার না করে দূরে ঠেলে সমাজকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন তারা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ছিলো, দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সেই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস থেকেই মানুষ অনেক সময় চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা উপলব্ধি করেছেন বলেই তাদের সার্টিফিকেটের মর্যাদা দিয়েছেন। তারাও তাকে ‘কওমি জননী’ আখ্যা দিয়েছে। এরপর কওমিদের দায়িত্ব ছিল নিজেদের তাগিদেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। তারা যায়নি বরং গিয়েছে জঙ্গি রাজনীতির দিকে। করোনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণ আন্দোলন করেছে। সর্বশেষ নরেদ্র মোদির সফর বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে টানা তিন দিনের তাণ্ডবে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট করেছে, ঝরিয়েছে প্রায় ১৪ জন মানুষের প্রাণ। অথচ হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জন্ম নেয়নি।
২০১০ সালে এটি ‘নাস্তিকতাবিরোধী’ সংগঠন হিসেবে জন্ম নেয়। হেফাজতের জনক দেশের প্রবীণতম আলেম হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতের মাধ্যমে জেহাদ অথবা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের কথা কখনো বলেননি। অথচ রফিকুল-মামুনুলরা কথায় কথায় জেহাদ চাচ্ছেন। ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে ‘নাস্তিকতাবিরোধী’ কর্মসূচি দিয়ে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিলো আল্লামা শফী সেই দূরত্ব শেষ করে দিয়েছিলেন। কওমি ঘরানার লোকজনের কাছে তিনি অত্যন্ত পরিচিত এবং সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন, যদিও সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পান শাপলা চত্বরের ঘটনায়। ওই ইস্যুটি তাকে কওমি ধারার একক নেতায় পরিণত করেছিলো। তার মৃত্যুর পর এখন কওমিদের মধ্যে খেলাফতের মহাসচিব মামুনুল হকসহ যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আছেন তারা সংগঠনটিকে বিপথে পরিচালিত করে পুরো কওমি পারিবারের লোকদের বিপদের মুখে ফেলেছেন। ফেসবুক থেকে