নূরী জাহানারা : সচেতনভাবে তৎসম ও তদ্ভব শব্দ ব্যবহার কম করার প্রয়াস থেকেই বাংলাভাষা বাংলাদেশে আরও সহজ একটি নিজস্ব রূপ পেয়ে বিকশিত হয়েছে। একইভাবে সচেতন প্রয়াস নিয়েছেন অনেক লেখক ও কলম শ্রমিক। তারা আরবি-ফারসি শব্দের ফররুখ আহমদীয় রচনার বাতাবরণ থেকে বের করে বাংলাকে চলতি সময়ের উপযোগী করায় যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন। শব্দ গুরুত্বপূর্ণ। শব্দের ভেতর মিথ বাস করে। শব্দ আপনার বক্তব্যকে একটা অর্থ দেয়। আপনার বিশ^বীক্ষার প্রমাণ বহন করে। যদি ‘জবান’ বলেন তো এক অর্থ, যদি ‘বোল’ বলেন তো তার মিথীয় অর্থ আলাদা। আভিধানিক অর্থ এক হলেও শব্দগুলোর ভেতর আপনি কোনটি পছন্দ করলেন তা থেকে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট হয়। আপনি কোন গোষ্ঠীর সঙ্গে আপনার অস্তিত্বের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পান, সেটি প্রকাশ পায়।
কেননা শব্দের ভেতর সংস্কৃতি বাস করে। সংস্কৃতি বিষয়ে নিজস্ব পছন্দ আপনার ব্যক্তিগতভাবে থাকতেই পারে। তবে শ্রমিক শ্রেণির লড়াই নিয়ে একটি বহু পরিচিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি পুননির্মাণ করতে হলে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে ফররুখ আহমদের রাস্তায় যাবেন, না গ্রাম বাংলার অতি সাধারণ গায়েনদের কাছে শিখবেন। শেখাটা জরুরি। তবে কোন গুরু ধরবেন সেটা চেতনাগত। বামেরা নিজেদের শব্দ ভাণ্ডার এখনো তৈরি করতে পারেনি এটি বিশ্বাস করতে কষ্ট পাচ্ছি, তবে কথাটা দেখা যাচ্ছে সত্য। এতোখানি ধস নামলে শ্রমিক, কৃষকের জন্য যারা লড়াই করছেন বলে ক্লেইম করেন, তারা তো হজম হয়ে যাওয়ার কথা। হজম হওয়ার প্রক্রিয়াই দেখতে পাচ্ছি। তাদের ভাষার জন্যে এখন দ্বারস্থ হতে হচ্ছে সেসব শব্দের, যা বাঙালির ব্যবহার থেকে ওঠে গেছে বিংশ শতকে। আমরা এখন আর জবান বন্ধ কর বলি না, বলি- কথা কস্ না, চুপ থাক! ফেসবুক থেকে