স্পোর্টস ডেস্ক : [২] কোভি-১৯ এর ভয়ে দলের সেরা ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সফর থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। তাই একেবারে তারুণ্য নির্ভর একটা দল নিয়ে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের বিপক্ষে খেলতে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল।
[৩] ২০১৮ সালে সবশেষ সফরে শক্তিশালী দল নিয়েও টেস্টে হোয়াইটওয়াশ ও ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল উইন্ডিজ। এবার অনভিজ্ঞ, তরুণদের নিয়ে ভালো কিছু করা দলটির জন্য আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। তবে জেসন হোল্ডার, কিয়োরন পোলার্ডরা না আসায় যে তরুণরা দলে সুযোগ পেয়েছেন, তাদেরকে নিজের ক্যারিয়ারের গল্প শোনালেন কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড। উত্তরসূরিদের অনুপ্রেরণা দিয়ে লয়েড একটি খেলা চিঠি লিখেছেন। বাতলে দিয়েছেন ভালো করার মন্ত্র।
লয়েডের চিঠি
প্রিয় ছেলেরা,
[৪] এমন একটা সফর তোমরা শুরু করতে যাচ্ছ, আমি বুঝতে পারছি যার জন্য তোমরা হয়তো প্রস্তুত নও। সম্ভবত তোমাদের মনে হতে পারে, কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই তোমাদের হঠাৎ কঠিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার সবাই এটাও আশা করছে যে তোমরা লড়াই করবে এবং ফল এনে দেবে।
[৫] তোমাদের বিষয়টা এমনভাবে নেওয়া উচিত যে এটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে শূন্যস্থান পূরণের ব্যাপার না, বরং নিজেদের জায়গা পাকা করার সুযোগ। যোগ্যতার ভিত্তিতেই তোমরা সুযোগ পেয়েছ। এটাই নিয়তি। এটাই তোমাদের সুযোগ। বিশ্বকে নিজের প্রতিভা, দক্ষতা দেখানোর চমৎকার এক উপায়। সবাইকে দেখানোর সুযোগ যে, তোমরা দ্বিতীয় সারির ক্রিকেটার নও। তোমরাও শীর্ষ সারিতে উঠে আসতে পারো।
[৬] ১৯৬৬ সালে আমি মূল টেস্ট দলে ছিলাম না। অপ্রত্যাশিতভাবে, সিমুন নার্স চোট পায় আর প্রথম টেস্ট শুরুর ৪৫ মিনিট আগে আমাকে জানানো হয় যে আমি খেলছি। এরপর আমি টানা ৩৫ টেস্ট খেলেছিলাম কারণ, আমি ভালো করেছিলাম। আমরা সিরিজ জিতেছিলাম। আমি সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম যে নিজের প্রতিভা ও সামর্থ্য দেখানোর এটাই সুযোগ। আর সেটা আমি দুই হাতে কাজে লাগিয়েছিলাম।
[৭] এর চেয়েও বড় কথা, আমাদের অঞ্চলের যে কারোর জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য খেলতে পারা সবচেয়ে বড় সম্মানের। আমি সেই সময়েও তা বিশ্বাস করতাম, এখনও করি। তোমরা যে দলে ডাক পাওয়ার উপযুক্ত, এটা প্রমাণের সুযোগ তোমাদের সামনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি ও ক্যাপ পরতে পারার জন্য তোমাদের গর্বিত হওয়া উচিত। তোমরা অন্যতম সেরা ক্রিকেট জাতির প্রতিনিধিত্ব করছ, যাদের রয়েছে ঈর্ষণীয় রেকর্ড আর তা নিয়ে আমরা গর্বিত। মনে রেখো, আমরা কেবল ৫০ লাখের একটু বেশি জনসংখ্যার এক জাতি।
[৮] আমাদের রেকর্ডের একটি, টানা ২৯ ম্যাচ ধরে অপরাজিত। টানা ১১ জয়। টানা ১৭ বছর ধরে হারিনি একটি টেস্টও। এগুলো অতীতের কীর্তি ও অর্জনের স্রেফ ক্ষুদ্র একটি অংশ। যা অর্জনের পেছনে কঠোর পরিশ্রম ও নিবেদন লুকিয়ে আছে।
[৯] সবার আগে, আমি তোমাদের নিজেদের ফিটনেসের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে বলব। ব্যাটসম্যান বা বোলার যাই হও, সবসময় নিজের টেকনিক ও স্কিল গড়ার চেষ্টা করবে। আমার দল ঠিক এটাই করেছিল এবং আমার বিশ্বাস, তোমরাও তাই করবে। তোমাদের সামনে আমাদের টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি এবং আমাদের ক্রিকেটে গর্ব করার মতো আরও কিছু যোগ করার সুযোগ। এই প্রত্যাশা কেবল আমার নয়, পুরো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের। তোমাদের জয় ওদেরও জয় হবে।
[১০] তোমাদের কাছে বাংলাদেশ সফর ভীতিকর মনে হতে পারে। তবে তা অসাধ্য নয়। এটা আদর্শ একটি সুযোগ। বিচক্ষণ (টেস্ট) অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের অধীনে তোমরা নিজেদের নিবেদন, পেশাদারিত্ব, তারুণ্য ও জয়ের বাসনা দিয়ে নতুন একটি যুগের সূচনা করতে পারো। সব শেষে বলি, সাফল্য কাজের আগে আসে কেবল অভিধানে। তোমাদের জন্য আমার শুভকামনা। মনে রেখো, বেশিরভাগ মানুষকে বিচার করা হয় তারা যে বাধা পেরিয়ে এসেছে তার ভিত্তিতে। - দেশরূপান্তর /ক্রিকইনফো