ডেস্ক রিপোর্ট: আলী যাকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শুক্রবার সকালে শোকের ছায়া নামে ঢাকার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্প-কলাকুশলীরা।
অভিনেত্রী জয়া আহসান লেখেন, “আলী যাকের চলে গেলেন, কিন্তু বাংলাদেশের মঞ্চকে রেখে গেলেন আরও অনেক উঁচু করে— অভিনয়ে, সংগঠনে, প্রবর্তনে। দীর্ঘাঙ্গ ছিলেন। শুধু শারীরিক অর্থে নয়, শিল্পের উচ্চতায়ও। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তার অনুপ্রেরণা মঞ্চে এনেছেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় দিয়েছেন তার পূর্ণতা। অভিবাদন, শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা।”
“২০২০ সালটা ভয়ানক! আমাদের চারপাশ আস্তে আস্তে খালি হয়ে যাচ্ছে! একজন আলী যাকের এমন একটি প্রজন্মের অভিনেতা এমন একটি প্রজন্মের প্রতিনিধি, যাদের কারণে অভিনয় শিল্প বা পেশাকে খুব উঁচুমানের বা সম্মানজনক মনে হতো, এখন যেই সম্মান সম্ভবত জাদুঘরে থাকে! ওপারে ভালো থাকুন প্রিয় শিল্পী”, বললেন নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল।
অন্যদিকে আলী যাকের বিখ্যাত মঞ্চনাটক ‘গ্যালিলিও’কে স্মরণ করেন অভিনেত্রী অপি করিম। অভিনেতার সঙ্গে তোলা ছবি শেয়ার করে লেখেন, “গুডবাই মাই গ্যালিলিও।” মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি।
অভিনেত্রী শাহানাজ খুশি লেখেন, “কী ভারাক্রান্ত সকাল!! হায় রে ২০২০!! আমাদের সবার প্রিয় নাট্যব্যক্তিত্ব শ্রদ্ধেয় আলী যাকের ভাই আর নাই!! কয়েক দিন আগে যাকের ভাইয়ের জন্মদিন ছিল! বেশ কিছুদিন হলো তিনি অসুস্থ। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছিল। মনে হয়েছিল,জন্মদিনটা পার হয়ে গেলে যদি উনার কিছু হয়ে গেলে! যদি আর জন্মদিনে তিনি আমাদের পাশে না থাকেন!! কেমন সত্যি হয়ে গেল সে ভাবনা!”
আরও বলেন, “বিনম্র শ্রদ্ধা, এ শূন্যতা কোন কালে পূরণ হবার নয়। হয় না কখনো।”
“সংস্কৃতির এক বটবৃক্ষের বিদায়। স্যালুট। বাংলাদেশকে দিয়েছেন অনেক। শান্তিতে ঘুমান। শ্রদ্ধা”, এভাবে প্রয়াতকে স্মরণ করলেন নির্মাতা রেদওয়ান রনি।
গায়িকা সামিনা চৌধুরী লেখেন, “আলী যাকের... অভিনয়ের শক্তি... এবার বিদায় নিলেন...। আটকে রাখার শক্তি আমাদের কার আছে...। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন..”
অভিনেতা ফারুক আহমেদ বলেন, “বাংলা নাটকের বিস্ময়কর অভিনেতা এবং নির্দেশক আলী যাকের আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। আমিন।”
হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত ‘আজ রবিবার’ নাটকে বড় চাচা চরিত্রে অভিনয় করেন আলী যাকের। তার দুই ভাতিজি ছিলেন শীলা আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন। তিনজনের একটি ছবি শেয়ার করে শাওন লেখেন, “বড়চাচা…।”
১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আলী যাকের। তিনি ছিলেন চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্প বয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে কাটান আলী যাকের।
তিনি নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
আলী যাকের ৮ নং সেক্টরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।
১৯৭২ সালে তিনি মঞ্চনাটকের দল আরণ্যকে যোগদান করেন। নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত ‘কবর’ নাটকের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম মঞ্চে ওঠেন। পরবর্তীতে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে যোগদান করেন। সেখানে তার অভিনীত ‘দেওয়ান গাজির কিস্সা’, ‘নুরুল দিনের সারাজীবন’ দেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।
টেলিভিশন নাটকে ‘আজ রবিবার’ ও ‘বহুব্রীহি’ দিয়ে তিনি পরিচিত লাভ করেন।
আলী যাকের একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক, বঙ্গবন্ধু পদক, মুনির চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ একাধিক সম্মাননা পান।
সূত্র : দেশ রূপান্তর