মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে: স্প্যানিশ ভাষায় ‘পিবে ডি ওরো’ হচ্ছে ‘গোল্ডেন বয়’ বা সোনালী বালক। সারাবিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের আরাধ্য সেই বিস্ময় জাগানো সোনালী বালকটি ৬০ বছর বয়সে বুধবার পরলোক গমন করেছেন। তার মৃত্যু সংবাদ অপরাহ্নে প্রতিবেশী ফারুক খান ফোনে জানাতেই স্কুল জীবনের বন্ধুপ্রতিম দুই ভাই মোহাম্মদ সাব্বির ও মোহাম্মদ তানভিরের কথা মনে পড়লো। তারা ১৯৭৬ সালে কলকাতা থেকে ম্যারাডোনার ‘১০ নম্বর’ র্যাপলিকা জার্সিটি এনে আমাকে উপহার দেয়। সেই ফুটবল লিজেন্ড টরন্টোর সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিন্টুরও প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন বিধায় তাকে নিয়ে ১৯৯৩ সালে জীবনী গ্রন্থ: ‘হৃদয় ছুঁয়ে যায়’ লিখেন।
আর্জেন্টিনার ম্যারোডোনার কৃতিত্ব অপরিসীম। ব্রাজিলের কিংবদন্তী পেলে’র সমতুল্য বা অনেকটা বেশি। মাত্র ৩ বছর বয়সে একটা ফুটবল পেয়ে সারা রাত সেটা নিয়ে ঘুমান। ১০ বছর বয়সে হয়ে ওঠেন পেশাজীবী খেলোয়াড়। ১৪ বছর বয়সে একাধারে ১৩৬টি অপরাজিত খেলা খেলেন। অথচ তার জন্ম হয়েছিল রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের উপকন্ঠে দরিদ্র একটি পরিবারে; সংসারের আট সন্তানের মাঝে ছিলেন পঞ্চম। অকল্পনীয় গতি, দুর্দান্ত আক্রমণ, মাথার ভাবনায় পায়ে-পায়ে চমকের দ্যুতিতে মাথা-হাঁটু-পায়ে শুধুই শূন্যে ফুটবল নিয়ে ছোটা এবং ‘বা পায়ের’ অপ্রতিরোধ্য শক্তির এই খেলোয়াড়টি শেষ জীবনে এসে কোকেন সেবন ও মাদকাসক্তিতে নিজের দেহ-মন সবটাই খুইয়েছেন। মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ব্রেন সার্জারি হয়; সুস্থ হয়ে ওঠেননি, হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।
১৯৮৬ সালে ওয়ার্ল্ড কাপে আর্জেন্টিনার জন্য চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব ডিয়েগো ম্যারাডোনাই বয়ে আনেন। সে সময় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার একটি সফল গোল ছিল ‘হ্যান্ড অব গড’, যা ফিফা অর্থাৎ ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ‘গ্রেটেস্ট গোল’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং পরে সেটা তিনি নিজেই স্বীকার করেন; অর্থাৎ গোলটি পায়ের নয়, হাতের ছিল। এতে ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপটি ইংল্যান্ডের কাছে যুদ্ধে হারানোর প্রতিশোধটি আর্জেন্টিনার জনগণ সেভাবেই দেখেছে। এভাবে বিশ্বকাপে তার দুই দশকের একাগ্র পদচারণা ‘আইডল’ তুল্য হয়, যে কথাটা ২০০৬ সালে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বলেছেন আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকার কার্লোস টেভেজ। সেজন্য জনপ্রিয়তার বিবেচনায় তার মৃত্যুতে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টের অফিস ডিক্রি জারি করে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। আর শোক জানিয়ে টুইট করেছে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। নিশ্চয়ই তাদের মতো বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরাও শোকাহত।