মো. আখতারুজ্জামান : [২] দেশে এসএমই শিল্প উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর ২০ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এসএমই উদ্যোক্তাসহ বেশি কিছু বিষয়ে কথা হয় বিসিক চেয়ারম্যান মোশতাক হাসানের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন বিসিক নিয়ে তার নানা পরিকল্পনার কথা।
[৩] তিনি জানান, সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে সিটিপি নষ্ট করছে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা। ট্যানারির বর্জগুলো ছাঁকনির মাধ্যমে সিটিপিতে দেয়ার কথা থাকলেও সেটা মানছে না ব্যবসায়ীরা। তারা নিজেদের সুবিধে মত পাইপ ছিদ্র করে দেয়। বিসিকের নামে দোষ দিলেই তাদের লাভ। কারণ প্রতিমাসে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য বিষয়ে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা খরচ করছে বিসিক। যদিও এসব বিল ট্যানারি মালিকদের দেয়ার কথা ছিলো। তারা চামড়া শিল্প নগরীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিসিককে দোষ দিয়ে আসছে।
[৪] মোশতাক হাসান জানান, চামড়া শিল্পকে আধুনিক করতে আরও তিনটি ট্যানারি শিল্প নগরী তৈরি পরিকল্পনা রয়েছে। সাভার ট্যানারি শিল্প নগরীর পাশে আরও একটা নগরী তৈরি করা হবে। এর জন্য প্রাথমিক খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের মিরসরাইতে যে ট্যানারি শিল্প নগরী স্থাপন করা হবে সেটাতে খরচ হবে ২ হাজার কোটি টাকা। রাজশাহীতে যেটি হবে তার খরচ ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা।
[৫] বিসিক চেয়ারম্যান জানান, করোনাকালিন অন্যান্য খাতের চেয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্প খাতের সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘ ৬ মাস তাদের ব্যবসা বন্ধ ছিলো। এতে করে অনেক উদ্যোক্তা তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলেছে। তবে এই সময়ে কেউ কেউ তার পণ্য উৎপাদন করেছে। কিন্তু বিক্রি করতে পারেনি। বিসিকের অনেক উদ্যোক্তা রয়েছে যারা তাদের পণ্য মেলায় বিক্রি করে থাকে। এমন উদ্যোক্তারা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। কারণ করোনার কারণে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো মেলার আয়োজন করতে পারিনি। তবে কেউ কেউ অনলাইনে সীমিত আকারে তাদের পণ্য বিক্রি করছে।
[৬] তিনি বলেন, করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো প্রণোদনার অর্থ ছাড় দিতে নানা ধরনের গড়িমসি করছে। এসএমই খাতের ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে গত পাঁচ মাসে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। এই যে অগ্রগতি হয়েছে এটাও হতো না, যদি আমাদের তৎপরতা না থাকত। ঋণ বাস্তবায়নে আমরা প্রতিটি জেলায় পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করে দিয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত রিপোর্ট করছে।
[৭] তিনি আরও বলেন, আমরা বিসিকের পক্ষ থেকে প্যাকেজ ঋণ বিতরণের বিষয়ে ১৬টি প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিলো জেলা কমিটি। সরকার প্রতিবছর কম বেশি প্যাকেজ ঋণ দিয়ে থাকে। তদারকি না থাকায় তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হতো না। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যে যার মতে করে ঋণ দিত। এই কমিটি আজীব কাজ করে যাবে। এটা বিসিকের জন্য বড় অর্জন।
[৮] এসএমই ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অনীহার বিষয়ে মোশতাক হাসান বলেন, বলেন, সিএমএসএমই খাতের লোকরা ব্যাংক ও এনজিও টাকা মেরে দিয়েছে এমন রেকর্ড তেমন নেই। তারা ঋণ নিয়ে সঠিক সময়ে ফেরত দেন। তবে এসএমই খাতের ব্যবসায়ীদের ঋণের পরিমাণ কম থাকায় ব্যাংকগুলোর এ খাতে ঋণ বিতরণে অনীহা দেখাচ্ছে। কারণ এখানে ঋণ বিতরণ করতে গেলে কাজের পরিমাণ বাড়ে। তবে বিসিকের যে ঋণ কার্যক্রম রয়েছে সেটাই এসএমই খাতের ঋণ আদায়ের বিষয়ে বড় উদাহরণ। বিসিকের ঋণ আদায়ের হার ৯৩ শতাংশের বেশি।
[৯] উন্নত রাষ্ট্র গঠনে শিল্পের বিকল্প নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য ছোট বড় সব শিল্পকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমরা প্রতিবছর যে ২০ হাজার উদ্যোক্তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দেই তাদেরকে সহজে ঋণ দেয়া গেলে তারা ভালো উদ্যোক্তা হয়ে যাবেন। এর জন্য আমরা সরকারের কাছে ৬০০ কোটি টাকা চেয়েছি। এই অর্থ পেলে আমাদের যে ঋণ বিতরণ কর্মসূচি রয়েছে সেটার পরিধি আরো বাড়ানো হবে।
[১০] বিসিকের এ চেয়ারম্যান বলেন, বিসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ঋণ কর্মসূচির আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত বিসিকের ৭৮টি শিল্প ইউনিটে প্রায় এক কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।