ডেস্ক রিপার্ট: আস্থা সংকট আর মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে নিস্তেজ হয়ে পড়া দেশের পুঁজিবাজার আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মূল্যসূচক ও লেনদেন। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বাজার মূলধন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে বাজার মূলধন যোগ হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন সচল থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর মধ্যেও প্রায় বিনিয়োগকারীশূন্য অবস্থায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চলতে থাকে। পরে ২৬ মার্চ থেকে করোনা মহামারির কথা চিন্তা করে লেনদেন বন্ধ রাখা হয়।দীর্ঘ ৬৬ দিন পর ৩১ মে থেকে আবারও লেনদেন শুরু হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে গতি পেতে থাকে পুঁজিবাজার। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, করোনাকালে লেনদেন চালু হওয়ার পর থেকে, অর্থাৎ ৩১ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের বাজার মূলধন বেড়েছে ৮৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। ৩১ মে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ চার হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার এখন ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। পাশাপাশি বাজারে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হচ্ছে। ফলে লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও বাড়ছে, যার জের ধরে বাড়ছে বাজার মূলধন। ভবিষ্যতে বাজার মূলধন আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের অবস্থা বর্তমানে অনেক দেশের চেয়ে ভালো রয়েছে। আশার করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বাজার স্থিতিশীল থেকে বাজার মূলধন যদি ১০ লাখ কোটি টাকাও হয় সেটাকে স্বাভাবিক বলা যায়।
এদিকে করোনাকালে বাজার মূলধন বৃদ্ধির পাশাপাশি মোট লেনদেনও সন্তোষজনকহারে বাড়তে দেখা যায়। করোনার প্রথম দিকে মূল মার্কেটে লেনদেন নেমে যায় ৪০ কোটি টাকার নিচে। পরে তা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। ৩১ মে ডিএসইতে মোট ১৪৩ কোটি টাকার শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়। গতকাল তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩৯ কোটি টাকায়। একইভাবে এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক চার হাজার ৬০ পয়েন্ট থেকে বেড়ে চার হাজার ৯৯৭ পয়েন্টে পৌঁছেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশিকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কয়েকটি দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কিছু ভালো মানের কোম্পানির অনুমোদন। এছাড়া অনিয়ম করায় বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আরও কয়েকটি কোম্পানিকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকার কারণে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বাজারে এখন এসবের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
তারা বলছেন, এখন যেহেতু পুঁজিবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে, তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজুগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো রয়েছে। তবে বাজারের অবস্থা যেমনই থাকুক বিনিয়োগকারীদের উচিত সতর্কভাবে বিনিয়োগ করা, কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করা।
সূত্র : শেয়ার বিজ