শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা

প্রকাশিত : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:১৪ সকাল
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ০৭:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বেরিয়ে আসছে আসামিদের অপকর্মের ভয়াবহ তথ্য

ডেস্ক রিপোর্ট : ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত আসামিদের একের পর এক ভয়াবহ গোপন তথ্য বেরিয়ে আসছে। মেয়েদের ওড়না টানসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করেনি। প্রকাশ হচ্ছে তাদের বংশ পরিচয়, চরিত্র, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পারিবারিক অবস্থান।

অভিযোগ আছে গ্রাম থেকে আসা এই মেধাবী ছেলেরা এক সময় হয়ে উঠে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা এলাকার বড় ত্রাস। সবাই তাদের সমীহ করে। চাঁদা দেয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন সদস্যও তাদের বন্ধু হয়ে উঠে।

ছাত্রদের হয়রানি, মারধর নিত্য নৈমিত্তিক কাজ ছিল সাইফুরের:

এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে তরুণীকে গণধর্ষণ করার মামলার প্রধান আসামি এম. সাইফুর রহমান। পিতা তোয়াইদুল্লাহ। সে বালাগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।

ঐ সময় থেকেই সাইফুর অনেকটা উশৃঙ্খল প্রকৃতির ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে এমন কোনো অপকর্ম নেই যেখানে তার হাত ছিল না। ছাত্রাবাসে অবৈধ সিট দখল, সিট বাণিজ্য, খাবারের টাকা না দেওয়া, ক্রীড়া সামগ্রীর জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়া, সাধারণ ছাত্রদের হয়রানি, মারধর, মিছিল মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ, তৃতীয় ও চতুথর্ শ্রেণির কর্মচারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা ছিল তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ।

ছাত্রাবাসের পাশে বালুচর বাজারের ব্যবসায়ীরা তার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ছিল। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে সে দলবল নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করতো। বাকিতে খাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভয়ে এতদিন চুপসে ছিলেন সেখানের ব্যবসায়ীরা। এখানেই শেষ নয়। সাইফুর টিলাগড় ও বালুচরের সেলুনগুলোতে চুল কেটে টাকা পরিশোধ করতো না।

এমসি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আজহার উদ্দিন শিমুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে সাইফুর সম্পর্কে এমন তথ্য তুলে ধরে বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রীদের ইভটিজিং করা ছিল তার নেশা। তার ভয়ে কলেজের এক ছাত্রী দেড় বছর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আসেনি। মেয়েদের ওড়নায় টান দেওয়া ছিল তার খুব সাধারণ একটি কাজ। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ বিব্রত থাকলেও দৃশ্যমান ব্যবস্থা কখনোই নেওয়া হয়নি। সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছর সে এক সাংবাদিককেও শাসিয়েছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র জানান, ২০১৮ সালে তিনিসহ তার বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবনের সামনে। এ সময় সাইফুর এসে তাদের সঙ্গে থাকা মেয়ে বন্ধুটিকে উত্ত্যক্ত করে। প্রতিবাদ করলে সাইফুর সবাইকে বেধড়কভাবে প্যান্টের বেল্ট দিয়ে পেটায়। লজ্জা, আত্মসম্মান ও ক্ষমতাসীন সাইফুরের ভয়ে শিক্ষার্থীরা কাউকে এই বিষয়ে বলেননি। ঘটনা শুনে মেয়েটির অভিভাবক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন।

ওই ছাত্র জানান, এভাবেই শত মায়ের, বাবার, ভাইয়ের, বোনের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে সাইফুর। সে ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতো। ছেলে মেয়েদের ধাক্কা দিতো। এসব বিষয়ে ‘বড় ভাইদের’ কাছেও অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার হয়নি। করোনার আগে সাইফুরের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাতো।

গতকাল রবিবার সকালে ভারত পালিয়ে যাওয়ার সময় সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে সাইফুর গ্রেফতার হয়। সে গ্রেফতার হওয়ায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছে।

রনি হবিগঞ্জেও গড়ে তুলে অপরাধী চক্র:

শাহ মাহবুবুর রহমান রনি। হবিগঞ্জ সদরের বাগুনী পাড়ার বসিন্দা। পিতা শাহ জাহাঙ্গীর। তিনি মাজার ভক্ত লোক। রনি একজন মেধাবী ছাত্র হলেও তার সম্পর্কে এলাকাবাসীর ভালো ধারণা নেই। সে তার এলাকায় ও সিলেটে একজন নারী উত্যক্তকারী হিসাবে পরিচিত।

সিলেটে ছাত্রলীগের বড় নেতা হিসেবে জাহির করে সে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতো। সেখানেও সে বখাটেদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তোলে। এলাকায় গেলে তাদের নিয়ে নেশার আড্ডা বসাতো। তার জীবন ছিল অনেকটা বিলাসবহুল। মোটরসাইকেল চড়ে, দামি কাপড় পরে রীতিমত এলাকায় রাজপুত্রের বেশে চলাচল করতো।

রনি সায়েস্তাগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর সিলেট এমসি কলেজে পড়ার সুবাদে ছাত্রলীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়। এসময় ছিনতাই, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। তার প্রচুর আয়ের সুবাদে পারিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। ২০১২ সালের ৮ জুন এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে রনি আগুন দেয়ার ঘটনায় জড়িত ছিল বলে এলাকাবাসী জানান।

যখন যে ক্ষমতায় রবিউলরা সেখানে:

রবিউল ইসলাম। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার বড় নগদীপুর গ্রামের বাড়ি। পিতা, দেলওয়ার হোসেন। এলাকাবাসীর অনেকেই জানান, তার পরিবার বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

স্থানীয় চেয়ারম্যান শিবলী আহমদ জানান, এই পরিবার যখন যে ক্ষমতায় তার সঙ্গেই তাদের রাজনীতি। একসময় তাদের আবদুস সামাদ আজাদ, জাতীয় পার্টি নেতা ও পরে বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন চৌধূরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।

এছাড়া তারেক আহমদ। পিতা মৃত, রফিকুল ইসলাম। সুনামগঞ্জ শহরের হাসন্নগরস্থ ৫৭ নিসর্গ ঠিকানা থাকলেও সেখানে তারা থাকে না। তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার উমেদ নগর। বেশ কয়েক বছর থেকে সে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় বসবাস করে। পরিবারের অনেকেই লন্ডন প্রবাসী।

কিভাবে ঐ চক্রের সঙ্গে গেল অর্জুন:

অর্জুন লস্কর। পিতা, মৃত অমলেন্দু কুমার লষ্কর। জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলশাহ ইউনিয়নের মরিচা আটগ্রামের বাসিন্দা। তার চাচা অক্ষয়কুমার লষ্কর (কানু লষ্কর)। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এলাকায় তাদের পারিবারিক সুনাম রয়েছে। এলাকার একজন বলেন, সে কিভাবে ঐ চক্রের সঙ্গে মিশল আমরা ভাবতে পারছি না।

অপর আসামি মাহফুজুর রহমান মাসুম। তার বাড়ি কানাইঘাট। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আসামিদের মধ্যে তারেক ও রবিউল বহিরাগত, বাকিরা এমসি কলেজের ছাত্র। তবে শাহ রনি গত বছর এমসি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করলেও হলের রুম তার দখলেই ছিল। আর সাইফুর শিক্ষকদের বাংলো দখল করে বসবাস করতো এবং ঐ বাংলায় ছিল তার জন্য নিরাপদ। রাতে সেখানে জুয়া আর মাদকের আসর বসতো। ভয়ে আশেপাশের কেউ কিছু বলতো না।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটের এমসি কলেজ এলাকায় গাড়ি নিয়ে বেড়াতে যান স্বামী ও স্ত্রী। ঐ সময় ৫-৬ জন যুবক এসে জোরপূর্বক ঐ দম্পতিকে ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে বেঁধে রেখে নববধূকে গণধর্ষণ করে তারা।

গণধর্ষণের ঘটনার পর ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন ধর্ষিতার স্বামী। ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়