শিমুল মাহমুদ: [২] নুহাশ পল্লীর প্রতিটি স্থাপনায় মিশে আছে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্পর্শ ও ভালোবাসা। নাটক, সিনেমার শুটিংয়ের পাশাপাশি এখানে কেটেছে তার জীবনের অনেকটা সময়। কোনো এক ঘোর লাগা বৃষ্টির দিনে বিদায় নিলেও এখানকার ঘাস-ফুল, লতা-পাতা, জলধারা, জ্যোৎস্নাপ্লাবিত আকাশে মিশে আছে তার স্মৃতি।
[৩] করোনার কারণে দীর্ঘ ৪ মাস বন্ধ রেখে জুলাইয়ের শুরুতে খুলে দিলেও এখনো নুহাশ পল্লীতে যাতায়াত নেই দর্শনাথীদের। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাপন খান জানান, প্রতিষ্ঠানটিকে ঠিকিয়ে রাখতে প্রতি মাসে ব্যয় হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। গত ৪ মাস কোনও আয় ছিলো না। এখনও গড়ে প্রতিদিন আট থেকে দশ জনের বেশি মানুষ আসছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাও বড়ো একটি কারণ।
[৪] তিনি বলেন, আয়ের পুরোটাই ব্যয় হয় এখানকার রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মচারীদের বেতনভাতা এবং নেত্রকোনার কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের যাবতীয় খরচ মেটানোর জন্য।
[৫] গাজীপুর জেলা সদর থেকে নুহাশ পল্লীর দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার, সদর উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বড় গ্রাম বলে খ্যাত পিরুজালি গ্রামে অবস্থিত। গজারি আর শাল গাছের জঙ্গলের মধ্যে দূর্গ আকৃতির দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই সবুজের সমারোহ চোখ আর মন দুই-ই জুড়িয়ে দেবে।
[৬] প্রধান ফটক পেরোলেই চোখে পড়ে চেয়ারে বসে থাকা হুমায়ূন আহমেদের ম্যুরাল। ডান পাশে রয়েছে একটি সুদৃশ্য দৃষ্টিনন্দন স্ট্যাচু।
এক মা তার ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশেই রয়েছে মাথার খুলির ভাস্কর্য আর ছোট ছোট আঁকাবাঁকা জলাধার। সেখানে পদ্ম, শাপলাসহ আরো অনেক জলজ ফুল। তারপর এক এক করে চোখে পড়বে হুমায়ূন আহমেদের ‘বৃষ্টিবিলাস’ ও বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর। বৃষ্টি রঙের বাড়িটির সামনে রয়েছে অনেকগুলো দোলনা। ইচ্ছে করেলেই দুলতে পারেন।
[৭] কিছুটা সামনে এগুলেই মৎস্য কন্যা, রাক্ষস ও ডাইনোসারের মূর্তি। নুহাশ পল্লীর সর্ব উত্তরে রয়েছে অত্যন্ত সুন্দর ‘দিঘি লীলাবতী’। দিঘির মাঝখানে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম দ্বীপ যা একটি কাঠের সেতুর সাথে যুক্ত। পাশেই ভুতবিলাস নামক ভবনটি।
[৮] এছাড়াও রয়েছে প্রায় তিনশ প্রজাতির ঔষধি গাছের সমৃদ্ধ সংগ্রহ। ঔষধি উদ্যানের পাশেই রয়েছে হুমায়ুন আহমেদের এক জন্মদিনে “অন্যদিন” পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া হুমায়ুন আহমেদের একটি পাথরের স্ট্যাচু। উদ্যানের অন্য পাশে রয়েছে হাঁস-মুরগী ও গরুর খামার। পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। কিছুদূর এগুলেই প্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সমাধি।
[৯] ১৯৮৭ সালে ২২ বিঘা জমিতে হুমায়ূন আহমেদ তার পুত্র নুহাশের নামানুসারে নুহাশ পল্লী গড়ে তোলেন। বর্তমানে এর আয়তন প্রায় ৪০ বিঘা।
[১০] নুহাশ পল্লী ঢুকতে কোন পূর্ব অনুমতি লাগে না। ২০০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে যে কেউ ঢুকতে পারে। ১০ বছরের কমবয়সী বাচ্চা, ড্রাইভার এবং গাড়ি পার্কের জন্য টাকা লাগে না। উল্লেখ্য, হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করতে হলে এন্ট্রি ফি লাগে না। মূল গেইটের বাইরে বাম দিয়ে সমাধির জন্য আলাদা আরেকটি গেইট আছে। যে কেউ সেই গেইট দিয়ে ঢুকে কবর জিয়ারত করতে পারবেন। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব