রোজিনা ইসলাম: নয়া দিল্লির আইআইএমসিতে পড়তে গিয়ে জীবনে প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম সেখানে পোশাকের দিকে তাকানোর কারও সময় নেই। সেখানে সকলে দৌড়াচ্ছে কাজের জন্য,শেখার জন্য,অর্জনের জন্য। তাদের আলাপ-আলোচনা অনেক বৃহৎ বিষয়ে।আমরাও একইভাবে ছুটছিলাম।এমনও দিন গেছে রাতে যে পায়জামা পরে শুয়েছিলাম ভোরে সেটা চেইঞ্জ না করেই গায়ে ফতুয়া চাপিয়ে ক্লাসে দৌড় দিয়েছি। আমাদের ব্যাচে কেউ হিজাব পরতো,কেউ স্লিভলেস পোশাক। এসব নিয়ে কখনো কোনো কথা ওঠেনি।এখনও বিদেশে গেলে আরামের জন্য,ঝামেলা এড়াতে তাই করি আমি। কিন্তু আমার দেশে আমি ওড়না ছাড়া ঘুরে বেড়ানোর সাহস করতে পারিনি আজও।এটাই সত্য।কেউ আমাকে মানা করেনি তবে সমাজ বা পরিবার থেকে যে কেউ কিছু বলবে না তা মনে হয়নি।একবার কেনো যেনো বোরকা ও হিজাব পরা শুরু করবো ভেবেছিলাম।পরে মনে হলো এ পোশাকে সাংবাদিকতা করা সহজ হবে না।আরও নানা ভাবনা এলো। ভাবলাম ইরান,ইয়েমেনসহ অনেক মুসলিম দেশেই এমন পোশাক পরে একই পেশায় দায়িত্ব পালন করছে, আমরা কেনো পারবো না?ওই যে ভয়,জড়তা-অস্বীকার করার তো ঊপায় নেই।আবার আমার অনেক পরিচিত বা স্বজনকে দেখেছি ফ্যাশনের জন্য হিজাব পরে বা বাচ্চাকে স্কুলে নেওয়ার সময় পোশাক পাল্টানোর ঝামেলা এড়াতে বোরকা পরিধান করে।আমাদের মা-খালারা বা গ্রামের নারীরা খুব সাধারন বিবেচনায় ইসলামকে মেনে পর্দা করে।যাই হোক,আমি সবসময়ই খেয়াল করি আমি যাই পরিধান করি বা করবো তা যেনো মার্জিত হয়,আমি যেনো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি,আমার যেনো অস্বস্তি না লাগে।এটা তো শতভাগ ঠিক কে কী পোশাক পরিধান করবে তা তার ব্যক্তিগত পছন্দ,কিন্তু এটাও সত্য আদৌ কী আমরা পছন্দমতো সব করতে পারি। অনেক সময় কাজ বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। সর্বোপরি কেউ বোরকা পড়ুক, শার্ট প্যান্ট বা সালোয়ার কামিজ সব ছাপিয়ে আমার কাছে মানুষটাই গুরুত্বপূর্ণ।একজন মা তার শিশুর সাথে আনন্দ নিয়ে খেলছে-এমন সুন্দর দৃশ্যর বাইরে আমার মনে বা চোখে কিছুই আসেনি। আমার মতের সাথে কেউ কেউ একমত না হতেই পারেন, অন্যের মতামতকে আমি সবসময় সম্মান জানাই।তবে যা অনুভব করি লিখলাম। ফেসবুক থেকে