জাকারিয়া জাহিদ: [২] কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ‘বালুক্ষয়’ রোধে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবীতে পরিনত হয়েছে। প্রতিনিয়ত বালুক্ষয় বিষয়টি হতাশায় রূপ নিয়েছে। বালু ক্ষয়ের এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের লীলা ভূমি সাগর কন্যা কুয়াকাটা সৈকত। বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যাবলী এবং ছোট হয়ে আসছে কুয়াকাটার মানচিত্র।
[৩] সরকারের উচ্চ মহল থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এটি ব্যাপক আলোচিত শব্দ। গণমাধ্যমে সমস্যাটি বার বার উঠে আসলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তাদের। রক্ষাপ্রাচীরের চারদিকে প্রতিরোধ শক্তি মোতায়েন না করে গুপ্তধন রক্ষার বৃথা চেষ্টা হঠকারী সিদ্ধান্তের হতাশাজনক পরিণতিকে প্রমাণ করে। ঠিক তেমনি সৈকতের বালুক্ষয় রোধের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ হাতে না নিয়ে বেড়িবাঁধ পুনর্র্নিমাণ কতোটুকু সফল হবে তা আলোচনায় উঠছে সচেতন মহলে।
[৪] বিশ্বব্যাংকের ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ পুনর্র্নিমাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ খবরে উপকূলবাসী খুশি হলেও প্রতিবছরের ন্যায় বর্ষার এ মৌসুমে অবিরাম গতিতে বালুক্ষয় দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তাদেরকে।
[৫] ১৯৮৪ সাল থেকে কুয়াকাটার বিভিন্ন অংশে বেড়িবাঁধ রক্ষায় সিসি ব্লক ব্যবহার করা হয়। তবে এ পর্যন্ত তার কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ইতোপূর্বে ৪৮ নম্বর পোল্ডারের মাঝিবাড়ি ও মিরাবাড়ি সংলগ্ন তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিসি ব্লক দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হয়। দুঃখের বিষয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রচেষ্টাতে আর ঢেউয়ের রুদ্ররোষের কাছে ব্যর্থ হয়ে যায়। অতি সম্প্রতি ভাঙ্গন ঠেকাতে কুয়াকাটার তিনটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধের স্লোপে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হয়। দুদিন পার না হতেই তাও স্রোতের তোড়ে ধুয়ে যাচ্ছে সাগর গর্ভে।
[৬] অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, গ্রোয়েন বাঁধ সৈকতের বালুক্ষয় রোধে একটি কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় গ্রোয়েন বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সৈকত ঘেঁষা স্রোতের গতিপথ পরিবর্তন একটি প্রযুক্তিগত কৌশল। এ কৌশল ব্যবহার করে প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের ছোবল থেকে সৈকতকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মত দেন তারা।
[৭] বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন এ বিষয়ে জানান, কুয়াকাটা সৈকতের অব্যাহত বালুক্ষয় পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ সংরক্ষণে বালুক্ষয় রোধ জরুরী হয়ে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রোয়েন বাঁধ নির্মিত হলে তা সৈকত রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে তবে এর চেয়ে যদি আরও কোন প্রযুক্তি থাকে তাহলে তাও করা উচিৎ।
[৮] কুয়াকাটা পৌরমেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, বাঁধ পুনর্র্নিমাণের কাজ একটা ভালো উদ্যোগ। তবে পাশাপাশি বালুক্ষয় রোধে বীচ রক্ষা প্রকল্পের কাজও শুরু করা প্রয়োজন। দ্রুত এ কাজ শুরু না হলে পুনর্নির্মিত বেড়িবাঁধও এক সময় সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
[৯] কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের এ প্রসঙ্গে বলেন, বেড়িবাঁধ পুনর্র্নিমাণ ও বালুক্ষয় রোধ দুটি আলাদা প্রকল্প। বালুক্ষয় রোধে আমাদের পরিকল্পনা আছে। এ বিষয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সম্পাদনা: সাদেক আলী