দেবদুলাল মুন্না: [২] ঠিক দেড়মাস আগের ঘটনা। আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশে নিহা শহরে খুন হন এক ব্যাক্তি ও তার স্ত্রী তালেবানি জঙ্গীদের হাতে। তাদের অপরাধ ওই ব্যাক্তিটি বর্তমান সরকার সমর্থক। এজন্য তাদের বাসার উঠোনে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে জঙ্গীরা।
[৩] সে রাতে একটি ঘরে লুকিয়ে থাকা তাদের কন্যা কামারগুল দেখে ওই হত্যাদৃশ্যটি। এরপর কোনো রাতেই সে ভালোভাবে ঘুমাতে পারেনি। চোখ বুঝলেই সেই নৃশংস দৃশ্য ভেসে উঠেছে। বাসা ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে এক শিক্ষকের বাসায়। এরপর পরিচিত এক তরুণের মাধ্যমে যোগাড় করেছে অস্ত্র।
[৪] কেউ জানতো না তার এমন গোপন প্রস্তুতির কথা। গত সপ্তাহে মধ্য আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশে নিহা শহরে আবার হামলা চালায় তালেবানি জঙ্গীরা। একসময় গুলি করতে করতে জঙ্গীরা আসে কামার গুলের শিক্ষকের বাসায়। কিন্তু আগে থেকেই ওৎ পেতে ছিল কামারগুল। জঙ্গীরা আসার পরই সে একটি গাছের আড়াল থেকে গুলি করে হত্যা করে দুই জঙ্গীকে।বাকি তিন জঙ্গী পালায়। পালানোর সময় এক জঙ্গীর পায়ে গুলি করে সে। সে কারণে পড়ে যায় সেই জঙ্গী। তখন কামার গুল এগিয়ে গিয়ে সেই জঙ্গীকে বলে, ‘আমার নাম কামার গুল। তোমরা আমার বাবা-মা’কে মেরেছ। এখন থেকে তোমাদের দেখলেই আমি খুন করব।’
[৫] মঙ্গলবার আফগান সরকারের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এমনই এক অগ্নিকন্যার সংবাদ প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি। স্থানীয় পুলিশের প্রধান হাবিবুর রহমান মালেকজাদা এএফপিকে বলেন, জঙ্গিরা গুলের বাবাকে খুঁজছিল। তিনি সরকার সমর্থক ছিলেন। আর এই জন্যই তালেবান যোদ্ধারা তার বাড়িতে হানা দেয়। টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় তারা।তার স্ত্রী বাধা দিতে চাইলে বাড়ির বাইরে উভয়কে হত্যা করে নিষ্ঠুর তালেবান জঙ্গিরা।
[৬] পুলিশ কর্মকর্তা রহমান মালেকজাদাসহ বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে হবে। আফগানিস্তানে মেয়েদের প্রকৃত বয়স না জানানোটা সাধারণ বিষয়।
[৭] কামার গুল ও তার ছোট ভাইকে আফগানিস্তানের নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘোর প্রদেশের গভর্নরের মুখপাত্র মোহামেদ আরেফ আবের। তিনি এখন তালেবানি জঙ্গী দমনে বেসরকারি বাহিনীর নেতৃত্ব দিবেন। বীরত্ব দেখানোর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুলের উচ্ছ¡সিত প্রশংসা চলছে। মাথার কাপড় ও হাতে মেশিনগান নিয়ে তোলা গুলের একটি ছবি গত কিছুদিন ধরে ভাইরাল।
[৮] নাজিবা রাহাম নামে একজন গুলকে উদ্দেশ করে ফেসবুকে লিখেছেন,তার সাহসের প্রতি টুপি খোলা সম্মান! শাবাশ। ফজিলা আলিজাদা নামে একজন ফেসবুক পোস্টে গুলকে ‘পাওয়ার আফগান গার্ল’ বলেছেন।