ডেস্ক রিপোর্ট: [২] করোনা দূর্যোগে হঠাৎ করেই বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল, স্থগিত ও পাওনা টাকা আটকে দেয়ায় বিপদে পড়ে দিশেহারা এই পোশাক কারখানা মালিক মোস্তাফিজ উদ্দিনের কান্না আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সাময়িকীতে তার কান্নার ছবি ছাপা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়, ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কোথাও থেকে ক্রেতারা টাকা না পাঠানোয় ঈদ সামনে রেখে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদান করতে না পেরে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
[৩] ব্যাংকে তার ওই কান্নারত ছবিটিই প্রথমে অ্যাপারেল ইনসাইডার ও পরে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রকাশ পায়। অ্যাপারেল ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকায় মোস্তাফিজের মালিকানাধীন কারখানা ডেনিম এক্সপার্টে প্রায় ২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাদের বেতন-বোনাস দেয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন এই কারখানা মালিক পাওনা টাকা আদায়ের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও সফল হননি।
[৪] তিনি বলেন, বরাবরের মতো এবারও ঈদের আগে শ্রমিকদের হাতে বেতন-বোনাস আর ঈদ উপহার তুলে দেয়ার তাড়না থেকে টানা ১০ দিনের বেশি বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে আসছিলেন। শেষ দিন সকাল ১০টায় ব্যাংকে বসেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। বিকাল ৩টার দিকে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ইউরোপ কিংবা আমেরিকা কোনো দেশ থেকেই টাকা আসেনি। তাই আজকে আর কোনো লেনদেনের সুযোগ নেই।
[৫] মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, এ কথা শোনার পর আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। আগের রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। শেষ কর্মদিবসে শ্রমিকদের কী করে খালি হাতে বিদায় করব তা ভাবতেই আমার কান্না চলে আসে। কিছুক্ষণের জন্য নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।
[৬] তিনি বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকার গ্লোবাল ব্র্যান্ড গ্রুপ বা জিবিজির কাছে তার ৬ কোটি টাকার শিপমেন্ট হয়েছে। ফিলিপ গ্রিনের কোম্পানি আর্কেডিয়ার কাছে গেছে ২৫ কোটি টাকা পণ্য। পিকক নামের একটি ব্র্যান্ডের কাছেও প্রায় সমপরিমাণ টাকা বকেয়া পড়েছে। এভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিদেশি ক্রেতাদের কাছে প্রায় ৫৪ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। হাতে গোনা ২/৪টি কারখানা হয়ত এমন ধাক্কা সমলাতে পারবে। কিন্তু আমার মতো ছোট কারখানাগুলো কী করে টিকে থাকবে।
[৭] এই পোশাক কারখানার মালিক জানান, প্রায় ২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর কারখানা ডেনিম এক্সপার্টে প্রতি মাসে শ্রমিকের বেতন বাবদ খরচ হয় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কর্মকর্তাদের বেতন, ইউটিলিটি চার্জ আর জমি ভাড়া মিলিয়ে এক মাসে খরচ ৫ কোটি টাকা। আর উৎসব ভাতা হিসাবে দিতে হয় প্রায় ১ কোটি টাকা।
[৮] করোনা ভাইরাস সংকটে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য সরকার স্বল্প সুদের যে ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, সেখান থেকে ঋণ নিয়ে শ্রমিকের এপ্রিলের বেতন দিয়েছেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। কিন্তু দীর্ঘ ৩ মাস ক্রেতাদের কাছে বকেয়া জমে থাকায় ঈদের বোনাস দিতে গিয়ে সঙ্কটে পড়েন।
[৯] ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে কারখানা বানিয়ে মাত্র কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি অর্জন করেন মোস্তাফিজ উদ্দিন। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি, ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ভাতা ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি স্থাপন করে ইউরোপ আমেরিকার ক্রেতাদের নজরে আসেন। বাংলাদেশি পোশাক শিল্পোদ্যোক্তা ও পশ্চিমা ক্রেতাদের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে গত ৫ বছর ধরে ট্রেড শো এবং ব্যবসায়ী সম্মেলন আয়োজন করে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন ‘ডেনিম মোস্তাফিজ’ নামে। পূর্বপশ্চিম, সময়েরকন্ঠস্বর
আপনার মতামত লিখুন :