এইচএম দেলোয়ার : [২] যুদ্ধাপরাধীর দায়ে যাবতজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে চট্রগ্রামের লোহাগাড়ায় ১৭ মামলার আসামি বিধান বড়ুয়ার সহযোগি রকি বড়ুয়ার বাড়িতে গত ২৫ এপ্রিল গোপন বেঠক হয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে। এ গোপন বৈঠকের ব্যাপারে গোয়েন্দা রিপোর্ট হয়েছে বলে জানা গেছে এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রতিবেদনে অবগত করা হয়েছে। এ বৈঠকের ব্যাপারে স্থানীয় এমপি নদভীর নেক আর্শীবাদ রয়েছে বলেও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। উক্ত গোপন বৈঠকে সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী, মাওলানা তারেক মনোয়ার, রকি বড়ুয়াসহ অণ্যরা উপস্থিত ছিলেন বলেন গোয়েন্দা নজরদারিতে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে।
[৩] এ ব্যাপারে র্যাব-৭ গত ১২ মে পাচলাইশ থানাধীন মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে রকি বড়ুয়াসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করছে বলে র্যাবের প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে। র্যাব-৭-এর প্রেস রিলিজের বিষয়বস্তুত বলা হয়েছে ‘কুখ্যাত প্রতারক,ধর্ম ব্যবসায়ী,সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা ও যাবতজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে বেআইনিভাবে মুক্ত করার ষড়যন্ত্রকারি রকি বড়ুয়া ও তার ৬ সহযোগি আটক’। র্যাবের প্রেস রিলিজে স্বাক্ষর করেন সহকারি পরিচালক (মিডিয়া) মো. মাহমুদুল হাসান মামুন।
গোয়েন্দা সূত্রমতে, গত ২৫ মার্চ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার কর্তৃক সাজা স্থগিত করে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়ার পর পরই যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা মাওলনা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির বিষয়ে যুব মজলিসের আমির মাওলানা আল্লামা মামুনুল হকসহ বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর মুক্তির দাবি তুলতে থাকে।
গত ৩১ মার্চ দিবাগত রাত শেষে (০১-০৪-২০) লোহাগাড়া উপজেলার বিবিরবিলা পশ্চিম নতুন পাড়া জামে মসজিদ, চরম্বা ইউনিয়ন, ৪ নং ওয়ার্ড সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও তারেক মনোয়ার (জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ের নেতা, তিনি সরকার বিরোধী উগ্র বক্তা হিসেবে পরিচিত। তার উগ্র বক্তব্যের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার মাহফিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে) ফজরের নামাজ আদায় করেন। নামাজে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা শফিকুর রহমান। নামাজ শেষে রকি বড়ুয়ার বাড়িতে( ঠিকানা- চরম্বা, লোহাগাড়া, চট্রগ্রাম) গোপন বৈঠকে মিলিত হন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রকি বড়ুয়া, তার পিএস শফিউল আলম শহিদ, যুবলীগ সদস্য লোহাগাড়া উপজেলা, বর্তমান মেম্বার মো. ওসমান, সাবেক মেম্বার , ৪ নং ওয়ার্ড ও আওয়ামীলীগ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ, তার ছেলে শহিদ, মাওলানা আাব্দুস সবুর ( জামায়াত সমর্থক), মোহাম্মদ শাহাদত উল্লাহ,,সাবেক চেয়ারম্যান , চরম্বা ইউনিয়ন ( জামায়াত সমর্থক)।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রকি বড়ুয়া একজন সন্ত্রাসী এবং রাউজানের শীর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়ুয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগি। রকি বড়ুয়া নিজেকে ধর্মগুরু ( ভ্রান্তে) পরিচয়ে বৌদ্ধ ধর্মগুরুর গাড়ো পোশাক পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ উচ্চ পদস্থদের সাথে ছবি তুলে সাধারণ মানুষদের সাথে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে থাকে। রকি বড়ুয়াসহ সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ও তারেক মনোয়ারের সাথে গোপন বৈঠকে যারা ছিল তারা সকলেই পূর্বে জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ছিল। বর্তমানে তারা স্থানীয় এমপি ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীর সাথে ঘনিষ্ঠতা রেখে আওয়ামীলীগের পদ-পদবিসহ সকল ধরনের সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। স্থানীয়দের অনেকের ধারণা স্থানীয় এমপি নদভীর সকল ধরনের ছত্রচ্ছায়ায় ও ইশারায় সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী লোহাগাড়ায় গোপন বৈঠক করেছে।
কে এই বিধান ও রকি বড়ুয়া : ২০১১ সালে র্যাব-৭ রাত আড়াইটার দিকে ফেনী শহরের পূর্ব সিলোনীয়া গ্রামের জনৈক ইউসুফ আলির বাড়ি থেকে বিধান বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করে। ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর অস্ত্র মামলায় তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড দেয় আদালত। সাকা চৌধুরির ঘনিষ্ট বিধান বড়ুয়া ২০০৯ সালের ২৪ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ৪ নম্বর তালিকাভুক্ত। চট্রগ্রামের বিভিন্ন থানায় ৭টি খুন, ,১ টি অস্ত্র, ১টি অপহরণ,২টি সন্ত্রাস দমন, ও বিভিন্ন অপরাধে মোট ১৭ টি মামলা রয়েছে।
বিধান বড়ুয়ার সহযোগি রকি বড়ুয়ার ভারতের র’-এর এজেন্ট বলে জাহিরসহ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সখ্যতা রয়েছে বলে তার মোবাইলে ছবি ধারণ করে জাহির করে থাকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার ফটোসেশন রয়েছে- রকি বড়ু–য়া স্থানীয় এমপির ক্যাডার বলেও গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। স্থানীয় এমপিকে নিয়ে রকি বড়ুয়া ভারত সফর করেন এবং ভারতের বিভিন্ন নেতাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বলেও গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে।
আপনার মতামত লিখুন :