আশীফ এন্তাজ রবি : তখন দেশে কারফিউ চলছে। সাংবাদিকদের জন্য প্রতিটি অফিসে পাস পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যার সময় অফিস থেকে বাসায় যাবো। তখন শুনলাম অফিসে পাস এসেছে। অফিসের এক সিনিয়র সাংবাদিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পাস বিতরণের। আমি সেই সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে গেলাম। দেখলাম তার টেবিলে পাসের বান্ডিল। ভদ্রলোকের মুখ অসম্ভব গম্ভীর। পাস বিতরণের মতো গুরুদায়িত্ব পেয়ে তার চোখমুখই অন্য রকম হয়ে গেছে। তার সামনে সাংবাদিকদের দীর্ঘ লাইন। আমি সেই লাইনে দাঁড়ালাম। লাইনে দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম, সবাইকে পাস দেওয়া হচ্ছে না। সিনিয়র সাংবাদিক সবাইকে জেরা করছেন। কেন পাস দরকার, পাস ছাড়া কি কাজ করা যায় না?
ভাবখানা এমন পাস অতি দুর্লভ বস্তু। এগুলো সহজে খরচ করা যাবে না। অথচ আর্মি থেকে অফিসের প্রতিটি লোকের জন্য পাস দেওয়া হয়েছে। একসময় আমার পালা এলো। সেই সিনিয়র সাংবাদিক মহোদয় আমাকে আগাগোড়া দেখলেন। ভাবখানা এমন, চিনতে পারছেন না। তারপর একটা মজার কথা বললেন, তুমি একটু ঘুরে আসো, দেখি তোমার জন্য পাসের ব্যবস্থা করা যায় কিনা। আমার এমন হাসি পেলো। মানুষ ক্ষমতা পেলে কেমন অচেনা হয়ে যায়। হোক সে সাংবাদিক কিংবা ইউপি চেয়ারম্যান। আমি তাকে বললাম, এতো সময় তো আমার নেই। সন্ধ্যার মধ্যে আমাকে একটু ক্যান্টনমেন্ট যেতে হবেÑ এক কর্নেল সাহেবের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলবো। তিনি আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিলেন। আমি পাস না নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
পরদিন সকালবেলায় সেই সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে ফোন দিয়ে মাপ চাইলেন। বললেন, আমার জন্য দুটো পাস রেখে দিয়েছেন। আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, আমি একা মানুষ, দুটো পাস দিয়ে কী করবো বলুন। আমার দরকার একটি পাস। এক কাজ করেন আপনি আমার জন্য একটি পাস আমার বাসায় পৌঁছে দেন। সবচেয়ে ভালো হয়, পাসখানি পৌঁছে দিতে যদি আপনি নিজে আসেন। তিনি তাই করলেন। নিজেই এলেন। এই কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমি মনে করি না ত্রাণ চুরি করে কেউ বড়লোক হয়। লোকে ত্রাণ চুরি করে মূলত নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্য। এ সব ক্ষমতাপাগল মানুষদের সময়মতো টাইট দিলে তারা ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেবে। সময়মতো টাইট দেওয়াটা অতি জরুরি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :