মাজহারুল ইসলাম : [২] চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও সৌদিকরণ নীতির ফলে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে সেখানে অবস্থানরত ১৫ লাখ শ্রমিকের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অবৈধ বা বেকার হয়ে পড়েছেন। যায়যায়দিন
[৩] ফ্রি ভিসায় কেউ যাতে সৌদিতে যেতে না পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সেখানকার শ্রমিকদের দুরবস্থা এবং দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ গোপনীয় প্রতিবেদনে এসব উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে।
[৪] ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ১২টি, ২০১৮ সালের মার্চে ৮টি এবং এপ্রিলে ১৯টিসহ মোট ৩৯টি পেশায় প্রবাসীদের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সৌদি সরকার। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম দফায় ঘড়ি, চশমা, হাসপাতাল সামগ্রী, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও বিদ্যুৎ চালিত সামগ্রী, গাড়ির যন্ত্রাংশ, আবাসন উপকরণ, কার্পেট, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গৃহ ও অফিস আসবাবপত্র, বাচ্চাদের কাপড় ও পুরুষদের আনুষঙ্গিক জিনিস, গৃহস্থালি তৈজসপত্র ও কনফেকশনারি দোকানে ১২টি পেশায় প্রবাসীদের নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
[৫] ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরও ৮ পেশা, ট্রাক ও উইন্স (লরি) ড্রাইভার, জীবন বিমা ও ডাক যোগাযোগ, বেসরকারি গার্লস স্কুলের কর্মকর্তা ও শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শপিংমলে প্রবাসী নাগরিকদের নিয়োগ বন্ধ করে।
[৬] ২০১৮ সালের এপ্রিলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রজ্ঞাপনে-সিনিয়র মানবসম্পদ পরিচালক, কর্মী পরিচালক, শ্রমবিষয়ক পরিচালক, জনসংযোগ কর্মকর্তা, কর্মী ব্যবস্থাপক, কর্মচারী ডিউটি লেখক, নিয়োগবিষয়ক কর্মকর্তা বা কর্মচারী, স্টাফ লেখক (সুপারভাইজর), টাইম রেজিস্টার সংরক্ষক, জেনারেল রিসেপশনিস্ট, হোটেল রিসেপশনিস্ট, রোগী রিসেপশনিস্ট, বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ গ্রহণকারী, কোষাধ্যক্ষ, নিরাপত্তারক্ষী, সরকার সম্পর্কিত কর্মকর্তা, চাবি তৈরি বা মেরামতকারী, কাস্টমস্ কর্মকর্তা বা কর্মচারী এবং নারী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগে প্রবাসীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
[৭] ২০১৮ সালে ৩৭ হাজার ৮৪৯ এবং ২০১৯ সালে ৩১ হাজার ৬০৫ জন বাংলাদেশি সৌদি পুলিশের কাছে আটক হওয়ার পর ডেপুটেশন ক্যাম্পের মাধ্যমে দেশে ফেরত এসেছেন। এছাড়া, স্বেচ্ছায় কফিল (স্পন্সর) এর মাধ্যমে ফাইনাল এক্সিট নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে বহু বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে দেশে এসেছেন।
[৮] পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-১২ মোহাম্মদ মমিনুল রহমান স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে ১৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশার কাজ করছেন। সৌদি সরকারের ইকামা (রেসিডেন্ট কার্ড বা ওয়ার্ক পারমিট) ফি বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক মন্দাসহ বিভিন্ন কারণে ইকামা নবায়ন করতে না পারায় বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ বেকার হয়ে পড়ছেন। অনেকে বর্ধিত ইকামা ফি পরিশোধের জন্য নিজ পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন, যা সৌদি আইনে অবৈধ ও দন্ডনীয় অপরাধ।