শিরোনাম
◈ মুগদায় ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় কিশোর নিহত ◈ বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়া মে মাসে, নজর রাখবে ভারত ◈ দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু: চুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, যান চলাচল শুরু ◈ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভারত, চীন বা রাশিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত নয়: মার্কিন কর্মকর্তা ◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৫৪ সকাল
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ০৬:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপির মেজবানি দেওয়া উচিত

 

আনিস আলমগীর : ধানমন্ডি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, যেটাকে ধানমন্ডির প্রাণকেন্দ্র ধরা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী কে ছিলেন আমি গত এক মাসেও জানতে পারিনি। তার কোনো পোস্টার-প্রচারণা চোখে পড়েনি। এমনকি ১ ফেব্রুয়ারি ভোট দিতে গিয়ে তার কোনো অস্তিত্ব দেখিনি। মহিলা কাউন্সিলরের জন্য সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী কে ছিলেন তাও জানতে পারিনি। কয়েকজনের কাছে কৌতূহলবশত তাদের নাম জানতে চাইলামÑ কেউ তাদের নাম জানে না, মার্কাও জানে না। ধানমন্ডির এ ওয়ার্ডটি যেনতেন ওয়ার্ড নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ওয়ার্ডের ভোটার। তিনি সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন। আমি ধানমন্ডি সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছিলাম। ওই ওয়ার্ডের কাকলি স্কুল, ওয়ার্ড ব্রিজ স্কুল কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। কোথাও বিএনপির মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীর পোস্টার দেখিনি, ভোটারদের সাহায্যের জন্য যে অস্থায়ী অফিস খোলা হয়, তাও ছিলো না। বলা যায়, আশপাশের ওয়ার্ডে মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলরের পোস্টার দেখলেও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দেখিনি। কাউন্সিলর নেই মানে ওই ওয়ার্ডে তাদের মেয়রের প্রচারণাও নেই। নির্বাচনী প্রচারণাকালেও লক্ষ্য করেছি, বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের কোনো পোস্টার ওই এলাকায় ছিলো না।

ধরে নিলাম সরকারি দল তাদের সেটা করতে দেয়নি। পোস্টার লাগাতে এলে ছিঁড়ে ফেলেছে বা হুমকি দিয়েছে (যদিও এমন কিছু ঘটেছে বলে কোনো খবর দেখিনি বা শুনিনি)। সে কারণে আমার মনে প্রশ্ন ছিলো এমন একটা ছেলেখেলা নির্বাচন করে, বিএনপি কী করে মেয়র পদে জেতার আশা করেছিলো এবং জিততে পারেনি বলে ‘হরতাল’ ডাকলো। এসব কথা নির্বাচনের আগে বলিনি কারণ কেউ কেউ হয়তো পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনতেন। বিএনপি তো ভালো করেই জানে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্ভর করে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, প্রচারণা, জনশক্তি আর সরকারের ভূমিকার উপর। এর কোনটাতে তারা এগিয়েছিলো?
একটি উদাহরণ দিচ্ছি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আলোচিত কাউন্সিলর প্রার্থী আলেয়া সারোয়ার ডেইজি পরাজিত হয়েছেন। লাটিম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টুর কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছেন তিনি। কারণ একটাই সরকারি দলের প্রার্থী হলেও ডেইজির ছিলো না জনবল এবং পেশীশক্তি। সেটা ছিলো জাতীয় পার্টির প্রার্থীর। পুরো সিটি নির্বাচনের দিকে তাকালে মনে হয়, বিএনপি হারার জন্যই খেলতে নেমেছিলো। দু’জন প্রার্থী দিয়েছে, তারা তুলনামূলক নবীন এবং দুর্বল। দু’জনেরই সামান্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। একজন তাবিথ আউয়াল, যিনি গতবার ঢাকা উত্তর থেকে মেয়র নির্বাচন করেছেন, বয়কট করেছেন, মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর উপনির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকলেও কাজে লাগাননি। শুধু তাই নয়, ঢাকা উত্তরের ভবিষ্যৎ প্রার্থী হিসেবেও তার কোনো তৎপরতা ছিলো না। পাঁচ বছর পর আগের মতোই সরাসরি নাজেল হয়েছেন। সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ছিলেন সবদিক থেকে কাঁচা।

বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা প্রচারণায় বলেছেন ‘ঢাকাবাসীর পাহাড়সম সমস্যার সমাধান, লুণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের মাতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে’ ভোটাররা যেন ধানের শীষে ভোট দেন। কেউ কী বিশ্বাস করেছে, তাদের প্রার্থীরা সিটির পাহাড়সম সমস্যার সমাধানের যোগ্য, অভিজ্ঞ এবং নির্বাচিত হলে তারা সরকার থেকে সে সহায়তা পেতেন? তাদের কোনো ক্ষমতা আছে, মেয়র হলে খালেদা জিয়াকে জেলমুক্ত করার? একে তো দুর্বল প্রার্থী দিয়েছে, তার উপর ইভিএমে ভোট নিয়ে নানা নেতিবাচক প্রচারণায় ছিলো বিএনপি। ডে-ওয়ান থেকে তারা ভোটে ফোকাস না দিয়ে ইভিএমের বিরুদ্ধে লেগেছিলো। নেতিবাচক প্রচারণায় ছিলো।

বিএনপির উচিত ছিলো ইভিএমকে শক্তি বিবেচনা করে দলে দলে লোকজনকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো। এমনিতে ভোটকেন্দ্রের বাইরে যদি সমর্থক-কর্মীরা দলবেঁধে থাকে, ভেতরে পোলিং এজেন্টরাও শক্তি পায়। বিএনপি যুক্তি দেবে, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে পুলিশ আর আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাদের থাকতে দিতো না। বিএনপি কী এমন ১০ জন পোলিং এজেন্ট, নেতা দেখাতে পারবে যারা কেন্দ্রের বাইরে-ভেতরে পুলিশ বা আওয়ামী লীগের কর্মী দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আমি অন্তত এমন কোনো দৃশ্য বা খবর দেখিনি। তারা যদি ভোটের কারণে কেন্দ্রে গিয়ে গ্রেপ্তার হতোÑ সবাই তা দেখতো। মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হতো, যেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামেশাই গ্রেপ্তার হচ্ছে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে নির্বাচন কী সহী হয়েছে? সরকারি দল কী জোর করেনি? না সহী নির্বাচন হয়নি। সরকারি দল জোর করেছে। আর এ দেশে সহী নির্বাচন জনগণ কখনো দেখেনি, এমনকি ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনও নয়। সেটিকে তুলনামূলক ভালো নির্বাচন বলতে পারি আমরা। আমাদের এখানে জোর যার ভোট তার। মাঠে নেই তো ভোটের বাক্সেও নেই।

ইভিএমে ভোট কারচুপির সুযোগ না থাকলেও অভিনব উপায়ে সরকারি দল তাদের সুবিধা নিয়েছে এবার। অনেক স্থানে বুথে কালো কাপড়ে ঢাকা জায়গায় সরকারি দলের লোক উঁকি দিয়ে বা সরাসরি প্রবেশ করে তাদের মার্কায় বোতাম টিপতে বলেছে। সেটা মিডিয়ায়ও এসেছে। আমি নিজেও সেটা উপলব্ধি করেছি। আমি যখন মেয়র পদে ভোট দেওয়া শেষ করেছি, একজন আমাকে কাপড়ের বাইরে পেছন থেকে তাদের পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিতে বলে। আমার এমনিতে বিকল্প ছিলো না। কারণ অন্য কারও অস্তিত্বই আমি পুরো ওয়ার্ডে দেখিনি সেটা শুরুতে বলেছি। ফলে আমি এটাকে সরকারি দলের জোর হিসেবে দেখছি না, বিএনপির দুর্বলতা হিসেবে দেখছি।

বিএনপির নেতাকর্মী, পোলিং এজেন্ট থাকলে এই জোর কেউ করার সাহস রাখতো না। সাহস রাখলেও সেটা কাজে দিতো না। আচ্ছা তেজগাঁও এলাকায় কিছু কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আওয়াল যে প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন সেটা কীভাবে সম্ভব হলো। সোজা হিসাব সেখানে বিএনপির সমর্থক পরিপূর্ণ ছিলো। নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে ছিলো। তাই জোর করে তাদের ভোট কেউ অন্য মার্কায় দিতে পারেনি। দুই সিটি নির্বাচনে যা হয়েছে, ক্ষমতায় থাকলে বিএনপিও তাই করতো। কিন্তু আওয়ামী লীগ কর্মীরা সেটা অতি সহজে করতে দিতো কিনা আমি সন্দিহান। বিএনপির কর্মী আর আওয়ামী লীগের কর্মীর মধ্যে তফাৎ এখানেই।

সব দোষ সরকারের উপর দিয়ে, আর জনদুর্ভোগের জন্য হাস্যকর হরতাল না ডেকে, নিজেদের নেতৃত্বের দুর্বলতাগুলোও দেখা উচিত বিএনপির। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ভোটের জন্য নগর চষে বেড়িয়েছেন। তাদের সমর্থকরা কাউন্সিলর প্রার্থী আর মেয়র প্রার্থীর লিফলেট, ভোটার স্লিপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি ভোট ভিক্ষা করেছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীরাও মাঠে চষে বেড়িয়েছেন। তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও মাঠে দেখেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের মতো তারা সব জায়গায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে পারেননি বা যাননি। ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনার চেষ্টা না করে, নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত না করে, বিএনপি প্রার্থীরা যে ভোট পেয়েছেন, তা অভাবনীয়। আমার ধারণা, নির্বাচনকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলে, ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার না করে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে আসতে বললে ফলাফল আরও চ্যালেঞ্জিং হতো। ঈষৎ সংক্ষেপিত। ফেসবুক থেকে
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট, ইরাক ও আফগান যুদ্ধ-সংবাদ সংগ্রহের জন্য খ্যাত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়