শুভদীপ চন্দ : আজ (২৯ জানুয়ারি) রিকশার ভাড়া ঠিক করতে গেলাম, বললো ‘যা ভাড়া তাই দেবেন’। বললাম ‘প্রথম দিন’? বললো, ‘হ্যাঁ’। খেয়াল করলাম রথটিকে। জং ধরা রড বেল, বিবর্ণ হুড, ছেঁড়া সিট, পুরনো টায়ার। তার পরনে লুঙ্গি, চেকচেক শার্ট। পায়ে সেন্ডেল। প্রথম দিনটি কেমন হয় তাদের? এখানে সহকারী হয়ে তারপর পদে বসার সুযোগ নেই। তাই প্রথমবার বিসিএস ভাইভা বোর্ডের অভিজ্ঞতার চেয়ে কোনো অংশেই কম ভয়ংকর হওয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই তার মাথায় এক গাদা প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। আমি কী পারবো রাস্তা চিনতে? দরকষাকষি করতে? মানুষে গিজগিজ এ শহরে ইঞ্জিন গাড়িগুলো এক বুনো মেষের দল।
ছুটছে গর্জন করে। যেন পিষে দেবে ইঁদুররূপী রিকশাদের। আমি কী পারবো নির্বিঘে ঘরে ফিরতে? সে জানে যেকোনো দোষে সে দোষী। যেকোনো সংঘর্ষে তার ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। টিপস কিছু পায় নিশ্চয়ই। শর্টকাট রাস্তার ঠিকানা, ভাড়া কষার কৌশল, বিপদকালীন ব্যবস্থা। কিন্তু এ জ্ঞান প্রথমবার নামার পর মাঝ রাস্তায় থাকে না। সাঁই সাঁই করে গাড়ি চলে। সঙ্গে খানাখন্দ, ড্রেন, উঁচু স্পিড ব্রেকার, ট্রাফিক নির্দেশনা, পুলিশ, মোটর বাইক- হাজার ফ্যাকড়া। ডানে-বামে সামনে চোখ রেখে ব্যালান্সে চালাতে হয়। ভুলের দায় কেউ নেবে না। এ পেশায় সবাই সবার প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু তারাই রাস্তায় বন্ধু। কারণ কেউ এগোয় না। নেমে ভাড়া দিলাম। বললাম, ‘একটু বেশি আছে। আপনার নতুন জীবন ভালো কাটুক’। কিছু বললো না। টাকা বুকপকেটে রেখে দিলো হার্টের কাছাকাছি। হয়তো টানা ক্লান্তিতে বুক ধড়ফড় করছে। এ সব কিছুই না আসলে প্রথম দিনের আনন্দের কাছে। প্রতিটি মুহূর্ত মনে থাকবে। এবার ঢাকা এসেছি ভোট দিতে। বাস থেকে নেমে দেখি আকাশ ঢেকে গেছে পোস্টারে। শহর আরেকটি নির্বাচন দেখতে প্রস্তুত হচ্ছে। নতুন প্রতিশ্রুতি, নতুন অঙ্গীকার, নতুন স্বপ্ন। আর পুরনো চোখ। শহর ছেড়ে দিছি আর কী চাবো? চাই শহর আরেকটু মানবিক হোক। সুযোগ-সুবিধা নয়, মানবিকতা। একটি ওয়েলকাম নোট, একটি গুডবাই ম্যাসেজ। একটি অভিনন্দন বার্তা। ফেসবুক থেকে