মৌরী সিদ্দিকা : বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুসারে, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে। ঢাকা শহরে কমপক্ষে ২২৯টি স্পটে ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা মাদক সেবন করে।
মহাখালী ফ্লাইওভারে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ড্যান্ডির নেশায় মত্ত চার শিশু-কিশোরকে দেখা যায়। জুতার গাম বা আঠাকে বলা হয় ‘ড্যান্ডি’। এই গাম পলিথিনের ভেতর নিয়ে শ্বাস নেয় আসক্তরা। খুব দ্রুত মানুষকে মেরে ফেলতে পারে এই নেশা। সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় রাজধানীর অনেক পথশিশু ও ছিন্নমূল ‘ড্যান্ডি’র নেশায় মত্ত।
ডান্ডিতে আসক্ত একজন সোহাগ (১২) নিজের বাড়ির ঠিকানাও ভুলে গেছে! সোহাগ জানায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে সে তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তিতে থাকত। রিকশাচালক বাবার মৃত্যুর পর তার মা আরেকজনকে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। দুই বছর ধরে পথই তার ঠিকানা। সারা দিন ভাঙারি কুড়িয়ে যা আয় করে তা বিক্রি করে সে ড্যান্ডির নেশা করে। সোহাগ জানায়, এগুলো খাইলে কেউ মারলেও গায়ে লাগে না!
এমন অসংখ্য পথশিশুকে নেশায় মত্ত থাকতে দেখা যায়। তাদের প্রত্যেকের জীবনের গল্প প্রায় একই রকম। নেশার টাকা জোগাড় করতে অনেকে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এমএমএ সালাহউদ্দীন কাউসার যুগান্তরকে বলেন, ড্যান্ডির নেশায় কিডনি ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে সেবনে ক্যান্সারও হতে পারে। এছাড়া মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। নাকের ভেতরে ঘা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক খুরশিদ আলম বলেন, জুতার আঠা নিষিদ্ধ নয়। এ কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। অনেক ভাসমান শিশু-কিশোর এ নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, একমাত্র সচেতনতাই পারে মাদকাসক্তকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব