আবুল বাশার নূরু: বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স ‘সুবর্ণ ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ২৮তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও ২১তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করে তিনি এ ভবন উদ্বোধন করেন। প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন উপলক্ষে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘অভিগম্য আগামীর পথে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই। যে সমাজে প্রতিবন্ধী, অটিজম ও সুস্থ মানুষের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। স্বাধীন দেশে সকল মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে। দেশের প্রতিটি উপজেলায় সেবা সাহায্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করে আমাদের একটি সংবিধান দিয়েছেন। সে সংবিধানে তিনি প্রতিবন্ধীদের অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন। সংবিধানে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা স্পষ্ট লেখা আছে। বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করার যে পদক্ষেপ নিয়ে গেছেন তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত উন্নয়নের মূলনীতি অনুযায়ী কেউ পেছনে থাকবে না, সকলে সমানতালে এগিয়ে যাবে। সকল প্রতিবন্ধীকে সুরক্ষা এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অটিজম এবং প্রতিবন্ধী হিসেবে আমাদের দেশে কোনো সচেতনতা এর আগে ছিল না। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অত্যন্ত পরিশ্রম করে দেশ-বিদেশে অটিজম এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সারা পৃথিবীতে তিনি অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন অটিজম এবং প্রতিবন্ধী সম্পর্কে মানুষ যথেষ্ট সচেতন। প্রতিবন্ধী অসুস্থতা বা এবং কোনো রোগ নয়। জন্মগতভাবে দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে প্রতিবন্ধী এবং অটিজম হয়। আগে পোলিও হলে অনেকেই প্রতিবন্ধী হতো। বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা পোলিও ভ্যাকসিন দিয়ে পোলিওমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা প্রতিবন্ধিতা এবং অটিজমে ভুগছেন তাদের ভালোভাবে লেখাপড়া করে যত্ন নিয়ে ট্রেনিং দিয়ে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা যায়। তারা যেন মূলস্রোতের সঙ্গে ম‚ল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে থাকতে পারে। বাবা-মাকেও কষ্ট স্বীকার করতে হবে প্রতিবন্ধিতা দ‚র করার জন্য। তিনি বলেন, এখানে যেটা সবচাইতে বড় পয়োজন সেটা হলো আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা ছোটবেলায় পড়েছি কানাকে কানা বলিও না, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না। এই শিক্ষা ছোটবেলা থেকেই শিশুদের দিতে হবে। সবাই মানুষ সবাই একসঙ্গে চলবে এটাই হচ্ছে বড় কথা। আমরা চাই দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। তারা যেন পেছনে পড়ে না থাকে এ বিষয়ে আমরা তিনটি আইন প্রণয়ন করেছি এবং এসব আইন বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করেছি। ফাউন্ডেশন এই জন্য করেছি যে ফাউন্ডেশন থাকলে তার সুবিধা হলো বিভিন্ন দাতাসংস্থা বা দেশের সম্পদশালীরা এখানে সহযোগিতা করতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবেও অনেক প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশনকে সহযোগিতা করে। এখানে শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ট্রেনিং স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রতিবন্ধীদের পক্ষে ফেরসৌসী আক্তার, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাইদুল হক। অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধিতা থেকে উত্তরণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল এবং অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন-সংস্থা ও পিতা-মাতাকে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।