স্বপ্না চক্রবর্তী : যুক্তরাজ্যের বাজারে বাংলাদেশি কৃষিপণ্য ও মসলার চাহিদা কাজে লাগিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি ওসামা তাসীর।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে গত ৪৭ বছরের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। গত বছর দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৭৭.৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় ৩ হাজার ৯৮৯মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বিপরীতে আমদানির পরিমান ছিলো ৩৮৮ মিলিয় মার্কিন ডলার। তাই দেশটিতে আমাদের বাণিজ্য সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।
সোমবার ডিসিসিআই ও বাংলাদেশ সফররত ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিনিধিদলের নেটওয়ার্কিং সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ওসামা তাসীরের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ও সভাপতি বজলুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
ওসামা তাসির জানান, গত বছর বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রায় ২০০টির মতো ব্রিটিশ কোম্পানি ব্যাংকিং, জ্বালানি, অবকাঠামো, কনসালটেন্সি, শিক্ষা ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ করেছে।
তিনি ব্রিটেনের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, জাহাজ নির্মাণ, ওষুধ শিল্প, কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, পুঁজিবাজার ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
সভায় ঢাকা চেম্বারের পরিচালক ও কান্ট্রি কম্পিটিটিভনেস স্ট্যান্ডিং কমিটির সমন্বয়কারী পরিচালক আকবর হাকিম বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্ভাবনার ওপর তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকর্ষণে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করাসহ কর সুবিধার পাশাপাশি ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদান করছে। এ সুযোগ গ্রহণ করে যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ বলেন, দুদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও উদ্যমী। তিনি বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের ব্রিটেনে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্রিটেনে বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য, ফলমূল ইত্যাদির প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সভাপতি বজলুর রশিদ বলেন, বর্তমানে প্রায় ২৪০টি ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ ব্রিটিশ নাগরিকরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে অত্যন্ত আগ্রহী, যা খুবই আশাব্যঞ্জক বিষয়। দুদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক আরো বাড়াতে ঢাকা চেম্বারের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, বর্তমানে ব্রিটেনে ১২ হাজার রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে প্রতি বছর ৫ বিলিয়ন পাউন্ডের লেনদেন হয়ে থাকে। এগুলোতে বাংলাদেশে উৎপাদিত মসলার ও কৃষিপণ্য রপ্তানির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। এ সুযোগে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের ব্রিটেনে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
মুক্ত আলোচনায় ডিসিসিআই পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী, খন্দকার রাশেদুল আহসান ও মো. রাশেদুল করিম মুন্না, পারটেক্স গ্রুপের পরিচালক শওকত আজিজ রাসেল, ইউকেবিসিসিআইর পরিচলক ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া ও ফারজানা হোসাইন নিলা অংশ নেন।
সম্পাদনা: অশোকেশ রায়
আপনার মতামত লিখুন :