জাফর ওয়াজেদ : বাঙালি জীবনে অনেক প্রিয় বাক্যের একটিÑ ‘ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না’। এ কথার মানে কী? ইতিহাস কি একজন ব্যক্তি নাকি, যিনি ক্ষমা নামক একটি সদগুণ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন? ইতিহাস যে কী, সেটাই তো আমরা স্পষ্টভাবে জানি না। ইতিহাস শব্দের অন্বয় হলো, ইতি+হ+আস। অর্থাৎ যা কিছু এইরূপই ছিলো, তাই-ই ইতিহাস। দূর অতীত বা অনতি অতীতের দেশ-কাল-ব্যক্তির অবিকৃত ও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত রূপই ইতিহাস। দুঃখজনক যে, এ দেশে ইতিহাস বলে যেটা চলে এবং জনগণ বিশ্বাস করে তা বিকৃত এবং অসত্য অতীতের কংকাল। ইতিহাস শুধু প্রমাণ নির্ভরই নয়, সবক্ষেত্রেই নির্মোহ, অপ্রিয় ও নগ্ন সত্য। ফলে ইতিহাস প্রায়শই আমাদের অসহিষ্ণুতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনের পরিসর আমাদের এমনিতেই কম এবং সীমিত। তার ওপর যদি কোনো ইতিহাস আমাদের মনোমত এবং চাহিদামতো না হয় তাহলে আগুন জ্বলে ওঠে। কোনো গ্রন্থ যখন সত্য ইতিহাস বিবৃত করে, তখনই আমাদের সেই অসহিষ্ণুতার দন্ত-নখ বেরিয়ে পড়ে। আমাদের জীবনে যারা ‘আইকন’, তাদের সম্পর্কে আমরা ভয়ানক স্পর্শকাতর। তাদের জীবনের অন্ধকার দিকগুলোকে লুকিয়ে রাখতে চাই। অথচ সেই অন্ধকারও যে ইতিহাসের অংশ, তা অস্বীকার করার কোনো জায়গাই নেই। ইতিহাসকে ইচ্ছেমতো গ্রহণ করার প্রবণতাই আদতে ভয়ংকর। সত্য সব সময় ‘ভালো’ হবে, কদাপি ‘মন্দ’ হবে না, এই বিচার বুদ্ধি যেমন ভ্রান্ত, তেমনই ইতিহাস নিয়েও একই কথা। বাঙালি আর কবে সত্যিকারের ইতিহাসমনস্ক হবে কে জানে! দীর্ঘ সামরিক জান্তা শাসকরা ইতিহাসের যে বিকৃতি ঘটিয়েছেন, তা হতে বেরিয়ে আসার পথ কতোদূর কেউ জানে না, হায়!
নির্বাচিত মন্তব্য : আবদুল্লাহ হারুন জুয়েলÑ আপনারা যতো সজাগ হবেন ইতিহাস বিকৃতি ততোই কমে যাবে। ইতিহাস নিয়ে যারা করেছেন তাদের কেউ বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে করেছেন এবং সেটি স্বেচ্ছাসেবীর মতো। কেউ করেছেন শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়। বিভ্রান্তি বোধহয় এ কারণে। ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে হলে তা প্রফেশনালি করতে হবে। যেহেতু প্রফেশনালিজমের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জীবিকা নির্বাহ নির্ভরশীল তাই জীবিকা নির্বাহের অর্থসংস্থান বরাদ্দ না থাকলে ইতিহাসের মতো একটি বিষয় নিয়ে ফুলটাইম কেউ কাজ করবে না। আমার মনে হয় ইতিহাস গবেষণার জন্য কোনো ইনস্টিটিউশন দরকার। দরকার আপনাদের মতো ব্যক্তিদের।
বিধান মিত্র : সময় এবং ঘটনাপ্রবাহের নির্মোহ উপস্থাপনের নাম-ইতিহাস। আর আমাদের দেশে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির অন্ধ চোখ আর নষ্ট মনের সমবায়ে কল্পিত যে উপাখ্যান রচিত হয়, তাকেই ইতিহাস বলা হয়ে থাকে।