শিরোনাম
◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু

প্রকাশিত : ১৭ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫৫ রাত
আপডেট : ১৭ মার্চ, ২০১৯, ০৩:৫৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বন ও সমুদ্র ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের হরিনঘাটা-লালদিয়া

ইমরান হোসাইন: উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর, পায়রা পূর্বে বিষখালী আর পশ্চিমে বলেশ্বর নদের মোহনায় গড়ে উঠছে হরিনঘাটা বনাঞ্চল। বিভিন্ন বৃক্ষরাজির সুবাদে এ বনের পরিধি ক্রমশবাড়ছে। এ বনে হিংস্র প্রানী না থাকলেও আছে হরিণ, বন মোরগ, বানর, শুকর, গুইসাপ, নানা প্রজাতির সরীসৃপসহ প্রায় ২০ প্রজাতির বন্য প্রানী। বনে আছে অন্তত ৩৫ প্রজাতির পাখিসহ নানা প্রানীকূল। হরেক রকমের পাখ পাখালির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ।

জানা গেছে, সুন্দরবনের চেয়ে আকৃতিতে বড় প্রজাতির মায়াবি চিত্রল হরিণের বিচরণস্থল হওয়ায় এই বনের নামকরণ হয়েছে হরিণঘাটা বনাঞ্চল। দৃষ্টিনন্দন ঘন বন আর সবুজে-সবুজে ছাওয়া এ বনের সৌন্দর্যকে আরো আকর্ষণীয় করেছে লাল দিয়া, পদ্মা, লাঠিমারা পাশা পাশি সুবিশাল তিনটি সৈকত। সূর্যস্ত সুর্যোদয়ের দৃশ্য অবলোকনের জন্য এরচেয়ে উপযোগী স্থান আর বুঝি নেই।

সংরক্ষিত এই বনাঞ্চলকে ইকো ট্রুরিজম হিসেবে গড়ে তুলতে দর্শনার্থীদের স্বাচ্ছন্দে চলাচলের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় জলবায়ু ট্রাস্টের তহবিলের আওতায় বনের ভেতর বন আর সাগরের বিশাল জলরাশি দর্শনের লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ফুট ট্রেইল। আর এ ফুট ট্রেইল নির্মাণের কারনে বনের ভেতর এঁকে-বেঁকে চলা উচু পিলারের ওপর পায়ে চলা পথ দিয়ে প্রকৃতিপ্রেমি মানুষ নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে বনের প্রকৃতি ও সাগরতীর দর্শনের সুযোগ পাচ্ছেন। সাগরের কোল ঘেঁষা হরিণঘাটা বনের ভেতর নির্মাণাধীন ফুট ট্রেইল (বনের ভেতর পায়ে চলা সেতু আকৃতির পথ) হরিণঘাটা বনে দর্শনার্থীদের নিসর্গ মায়ায় টানছে। ফুট ট্রেইল নির্মাণের ফলে হরিণঘাটা বন আকর্ষণীয় পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ ছাড়াও বনের ভেতর বিশ্রামাগার ও গোলঘরসহ ৬০ ফুট মিটার উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মান করা হয়েছে।

পাথরঘাটা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ সাল থেকে বনবিভাগ এর সম্প্রসারণে নানা প্রজাতির বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে বনসৃজন শুরু করে। এর পরে ২০১৩-২০১৬ সালে এখানে ২০০ হেক্টর, এলাকা জুড়ে সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় নতুন বন সৃজিত হয়। আবার সাগর তীরে লালদিয়া চড়ের নতুন বন সৃষ্টি হওয়ায় বনাঞ্চলের পরিধি ক্রমশ বেড়ে চলছে। বর্তমানে প্রায় ১৫হাজার একর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন এ বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, ও গেওয়াসহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন রয়েছে। একদিকে বিস্তির্ন সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে অকৃত্রিম বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ যেন দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এ বনাঞ্চলটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হয় ২০১৫ সালে।

প্রকৃতির এই লীলায় সাজানো হরিণঘাটার বনে কর্মব্যাস্ত মানুষেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু বিনোদনের জন্য ছুটে আসেন লালদিয়ার এই সমুদ্র পাড়ে। পর্যটকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে আদায় করা হচ্ছে রাজস্ব।

পর্যটকরা বলছেন, এখানে সুন্দরবনের আমেজ ও সমুদ্র পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করছে। সমুদ্রের বিশালতায় পর্যটকরা পাচ্ছেন অন্যরকম অনুভূতি। ঠিক তেমনটি রয়েছে নানা অভিযোগ। অনুন্নত রাস্তাঘাট দিয়ে আসতে অনেকটাই কষ্ট করে আসতে হয় পর্যটকদের। কোন প্রশাসনিক নিরাপত্তা পায়নি বলে জানান পর্যটকরা। যে কারণে একটি পুলিশ ফাড়ি দাবি তাদের এবং নেই বিদ্যুতের ব্যাবস্থাও। হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া পর্যন্ত যাবার পায়ে হাটা সেতুটি হয়নি এখনও সম্পূর্ণ। যে কারণে পর্যটকদের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে মাছ শিকারের ছোট-ছোট নৌকায়। দ্রুত লালদিয়া সেতুটি করার দাবি পর্যটকদের।

পর্যটকরা আরও দাবি জানান এখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানা এবং বিভিন্ন স্থানে যদি বিভিন্ন প্রানীর ভাস্কর্য রাখা হয় তাহলে শিশুদের আরও ভাল লাগতো এবং শিশুরা শিখতে পারতো কোন প্রানী দেখতে কেমন।

দেশের দক্ষিণ প্রান্তের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় অবস্থিত এই হরিণঘাটায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। এখানে একদিকে যেমন উপভোগ করা যায় সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য, তেমনি দেখা মেলে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহে গড়ে ওঠা সবুজ নিসর্গ আর হরেক রকম বন্য প্রানীরও। তবে হরিণ ঘাটায় অবস্থিত এই বনের সব চেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলোর একটি হলো বনের ভেতরে এঁকে বেঁকে বয়ে চলেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০-১২টি খাল। জোয়ারের সময় যখন খালগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন ছোট ছোট নৌকায় করে উপভোগ করা যায় বনের মধ্যকার সবুজের সমারোহ। তবে এ বনাঞ্চল থেকে প্রতিদিনই উজার হচ্ছে কেওড়া, সুন্দরী, বাইনসহ নানা প্রজাতির গাছ। এখনই চুরি বন্ধ করতে না পারলে হুমকিতে পড়বে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য।

এ বনাঞ্চলের পাশেই রয়েছে লালদিয়া চর নামে পরিচিত ছোট্ট একটি সমুদ্র সৈকতও। যা পর্যটকদের ভীষণ ভাবে আকৃষ্ট করে। এই সৈকতে মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় এখানে নানা প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্ন বিচরন চোখে পড়ে। এ ছাড়াও সৈকতে ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দল ও প্রায়শই তৈরি করে দেখার মতো এক দৃশ্য।

হরিণঘাটা বন ও সাগর পাড়ে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। এতে সাগরের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এলাকার মানুষ নানা সম্ভাবনার আশা খুঁজতে শুরু করেছেন। এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী বুঁনছে স্বপ্নের জাল। তাই দ্রুত কাজ করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য উন্নত রাস্তাঘাট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বৃদ্ধি করার দাবি এলাকাবাসীর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়