আবুল কাইয়ুম
প্রায়শ দেখা যায় যে, কেউ কেউ ভুলে বা অসাবধানতাবশত শব্দের শেষে ‘স্থ’ স্থলে ‘স্ত’ এবং ‘স্ত’ স্থলে ‘স্থ’ ব্যবহার করে থাকেন। বানানের এই ভ্রম এড়ানোর জন্য আমি দুটি সহজ সূত্র বলে দিচ্ছি :
১. ‘স্থ’ তখনই কোনও শব্দের শেষে বসে যখন তা বাদ দিলে (অর্থাৎ ‘স্থ’ যুক্তবর্ণ বাদ দিলে) একটি অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়। অর্থাৎ অর্থবোধক শব্দের পরই ‘স্থ’ বসে। যেমন : ‘গৃহস্থ’ শব্দটি থেকে ‘স্থ’ বাদ দিলে ‘গৃহ’ এবং ‘মুখস্থ’ হতে ‘স্থ’ বাদে ‘মুখ’, এ দুটি শব্দই অর্থপূর্ণ। এমনি ‘মধ্যস্থ’, ‘তটস্থ’, ‘কণ্ঠস্থ’, ‘ধ্যানস্থ’, ‘অন্তস্থ’ ‘সুস্থ’, ইত্যাদি লিখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে ‘স্থ’ বাদ দিলে ‘মধ্য’, ‘তট’, ‘কণ্ঠ’, ‘ধ্যান’, ‘অন্ত’ ও ‘সু’ এসব অর্থবোধক শব্দ মেলে। তবে ‘সু’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠতে পারে, এটি তো সংস্কৃত উপসর্গ, একক অস্তিত্বে অর্থপূর্ণ কী করে হয়? না শব্দ হিসেবেও ‘সু’-এর অর্থ ‘উত্তম’ বা ‘সুন্দর’. যদিও এর ব্যবহার দুর্লভ। এই সূত্রের ব্যতিক্রম হিসেবে ‘দুঃস্থ’ ও ‘স্বাস্থ্য’ এ দুটি অতি-ব্যবহৃত শব্দ মনে রাখলেই চলে।
২. ‘স্ত’ তখনই কোনও শব্দের শেষে বসে যখন তা বাদ দিলে (অর্থাৎ ‘স্ত’ যুক্তবর্ণ বাদ দিলে) কোনও অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায় না। যেমন : ‘অভ্যস্ত’ শব্দটি হতে ‘স্ত’ বাদ দিলে যে ‘অভ্য’ শব্দাংশ পাওয়া যায় তা অর্থবোধক নয়। তেমনি ‘আশ্বস্ত’ শব্দের ‘স্ত’ বাদে যে ‘আশ্ব’, তা-ও কোনও অর্থ বহন করে না। তাই লিখতে হবে অভ্যস্ত (অভ্যস্থ নয়) এবং ‘আশ্বস্ত’ (আশ্বস্থ’ নয়)। এমনি ‘পরাস্ত’, গ্রস্ত, বিন্যস্ত, ব্যস্ত, সন্ত্রস্ত, ব্যতিব্যস্ত, অস্ত ইত্যাদি লিখতে হবে। এসব ক্ষেত্রেও ‘স্ত’ যুক্তবর্ণ বাদে ‘পরা’, ‘গ্র’, ‘বিন্য’, ‘ব্য’, ‘সন্ত্র’, ‘ব্যতিব্য’, ‘অ’ এসব কোনও শব্দ নয়। অর্থাৎ অর্থহীন বর্ণসমষ্টির পর ‘স্ত’ যুক্তবর্ণ যোগে অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি হয়েছে। এই সূত্রের ব্যতিক্রম হিসেবে অতিব্যব্যহৃত শব্দ ‘সমস্ত’ মনে রাখলেই চলে।
বলা ভালো, এই সূত্র দুটি ব্যাকরণের বিধি নয়, শুধু মনে রাখার কৌশল। প্রয়োগ করে দেখতে পারেন, ফল পাবেন। ফেসবুক থেকে