সাত্তার আজাদ, সিলেট: সিলেটে উৎপন্ন হওয়া ‘পিঠাকরা’ ফলের বাণিজ্যিক চাষ বাড়িয়ে তা বিদেশে রফতানি করা সম্ভব। দেশেও পিঠাকরার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সিলেটে মণিপুরী সম্প্রদায়ের কাছে পিঠাকরা খুবই জনপ্রিয় ফল। ভারত, চীন, কুরিয়া, থাইল্যান্ড মালয়েশিয়া, জাপানে খাবার হোটেলে ফলটির বীজ সুস্বাদু খাবার।
সিলেটী নাম ‘পিঠাকরা’। কোথাও কোথায় স্টিং মটরশুটি বলা হয়। ইংরেজি নাম বিটার বিন (পিঠাই)। গাছের বাংলা নাম পার্কিয়া। মূলত পিঠাই থেকে বিবর্তিত হয়ে সিলেটে পিঠা বা পিঠাকরা বলা হয়। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। ৭০/৮০ ফুট উঁচু হয়। পাতা সবুজ ও চিরল। কাঠে বিকট দুর্গন্ধ। গাছে লতানো শিমের মত ফল ধরে। ঝোপালো ফল। কাঁচা অবস্থায় ফলটি সবুজ পাকলে কালো হয়। আধাপাকা ফলের ভেতর বীজ ঘিরে শুকনো সাদা গুঁড়ো দুধের মত পাউডার থাকে। সিলেটে শিশুরা এই ফল পেড়ে খোসা আলগ করে গুঁড়ো পাউডার খেত। খেতে মিষ্টি। খাওয়ার পর মুখে, দাঁতে আঠার মত লেগে থাকে।
মূলত এই ফলের বীজকে স্টিং মটরশুটি বলা হয়। কাঁচা ফল পেড়ে বীজ বের করে চিংড়ি ভূনা বা গরু, মোরগ, খাসির মাংসের সাথে চিবিয়ে খেতে হয়। ভিনদেশিরা শুকরের মাংসের সাথে খায়। বীজ শুকিয়েও বিস্কুটের মত চিবিয়ে খাওয়া যায়। কাচা অবস্থায় বীজ খেতে কিছুটা কষালোভাব। কচি বীজ বেটে সালাদের মত খাওয়া যায়। হাল্কা গন্ধও আছে। খেলে নেশার মত লাগে এবং বার বার খেতে ইচ্ছে করে।
ফলটি খেলে পেটের মিথেন গ্যাস দ্রুত বের করে দেয়। রক্তচাপ কমায়। প্রস্রাবের যন্ত্রণা নিরোধক। খাবারের রুচিবর্ধক। এটি থাইল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী খাবার। সিলেটে মণিপুরীদেরও ঐতিহ্যের খাবার।
আগে সিলেটে প্রচুর পিঠাকরা গাছ ছিল। এখন চোখে পড়ে না। পাহাড়-টিলা ও বনভূমি উজাড় করে ফেলায় গাছটি প্রায় বিলুপ্ত। মণিপুরীরা খুব আদর করে গাছটি লাগাতেন; কিন্তু এখন তাদের বাসাবাড়িতেও গাছটি দেখা যাচ্ছে না। মণিপুরী সম্প্রদায়ের নেতা সংগ্রাম সিংহ বলেন, ফলটি আমাদের খুবই প্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার। ফলটি বিদেশেও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। আগে আমাদের প্রতিবাড়িতে গাছটি ছিল। খুব যত্ন করা হত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মড়কে একেএকে গাছগুলো মরে যায়। এ নিয়ে কৃষি বিভাগের গবেষণা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি।