মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে ভারতীয় বহুল আলোচিত ব্লগ ‘দ্য ওয়্যার’-এ একটি তির্যক ও সুদীর্ঘ প্রতিবেদন লিখেছেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়েজামাই সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান। যার শিরোনাম ‘হোয়াট ক্যান টিউলিপ সিদ্দিক ডু টু লেসেন হিউম্যান রাইটস অ্যাবিউজ ইন বাংলাদেশ?’ অর্থাৎ বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন কমাতে টিউলিপ কী করতে পারেন। ওই প্রতিবেদনের সূচনায় জাতিসংঘের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্কের পথে লন্ডনে শুক্রবার যাত্রা বিরতিতে অবতরণরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে- হাসিনার লন্ডনে দুই প্রধান পরিবার সদস্য থাকেন। নিজের ছোটবোন, শেখ রেহানা ও ভাগ্নি, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক। এরপরই তাতে স্থান পেয়েছে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ‘প্রাইভেট আই’ ম্যাগাজিনে মুদ্রিত ইরানে বন্দি ইরানি-ব্রিটিশ দ্বৈত নাগরিক নাজানিন জাগারি র্যাটক্লিফের মুক্তির দাবিতে সোচ্চার টিউলিপ সিদ্দিকের অকুন্ঠ প্রয়াস। সেক্ষেত্রে ম্যাগাজিনের উদ্ধৃতিতে ইরানি কর্তৃপক্ষ যেহেতু ‘তার কোনো কথাই কর্ণপাত করছে না’, সেহেতু নজর দেওয়া দরকার ‘একটি রাজনৈতিক শাসকের পানে, যেখানে সরাসরি দেশটির প্রায় সকল সিনিয়র নেতার দ্বার তার জন্য উন্মুক্ত।’ এক্ষেত্রে অপর ব্রিটিশ গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ফোর’-কে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, আহমেদ বিন কাসেম নামের বাংলাদেশি আইনজীবির গুম হওয়াকে কেন্দ্র করে তার মা সরাসরি টিউলিপের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাই এখন যখন তার খালা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে, তখন বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের তীব্রতা নিরসনে টিউলিপের ভূমিকাটি নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
ফলে তির্যকভাবে বলা হয়েছে- টিউলিপ সিদ্দিক তার খালা শেখ হাসিনার অতি নিকটজন, নিজের মেয়ের ক্ষেত্রে ‘রোল মডেল’। ২০১৫ সালে তিনি উত্তর লন্ডনে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে বলেছেন, ‘আজ আমি আমার খালা শেখ হাসিনাকে স্মরণ করছি। তার জন্য আমি শিখেছি কী করে প্রচারণা চালাতে হয়। এবং তার জন্য শিখেছি কী করে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয়।’ এমনকী পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিতে গিয়েও শেখ হাসিনার নামটি বলেছেন।
লন্ডনে থাকলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিউলিপ সরাসরি জড়িত। এমপি হওয়ার আগে লেবার পার্টির অ্যাকটিভিস্ট হিসেবে টিউলিপ তার ওয়েবসাইটে দাবি করেছেন (এখন সরিয়ে ফেলা হয়েছে), ‘আওয়ামী লীগের মুখপাত্র’ এবং বাংলাদেশে দলটির জন্য প্রচারণাও চালিয়েছেন। ২০১১ সালে জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনেও মা রেহানা সিদ্দিকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দলে ছিলেন। সে কারণে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা অস্বীকার করার নয় এবং একইভাবে ব্রিটেনের ৬৫০ জন এমপিরও অপর দেশের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্কটি অস্বীকার করার নয়। অবশ্য এই ঘনিষ্ট সম্পর্কের প্রশ্নটি একমাত্র ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকেরই মুখোমুখি হতে হবে জনসমক্ষে কিংবা অন্তরালে, যেখানে তার খালা ও অপর পরিবার সদস্যরা বাংলাদেশে রয়েছেন, যে দেশটি উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার লংঘনের পর্যায়ে পর্যবসিত।
বলাবাহুল্য, এই প্রতিবেদনটিতে ‘চ্যানেল ফোর’ কর্তৃক ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল ইউটিউবে আপলোড করা ‘বাংলাদেশ পিএম রিফিউজেস টু অ্যানসার কোয়েশ্চেন্স অন হিউম্যান রাইটস রেকর্ড’, অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মানবাধিকার বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দেননি, ভিডিও ক্লিপটি সংযোজন করা হয়েছে।
ই-মেইল: bukhari.toronto@gmail.com
আপনার মতামত লিখুন :