অনলাইন ডেস্ক : হিন্দু প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্য স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম থেকে হিন্দু হয়েছিলেন এক ভারতীয় যুবক। সেই সঙ্গে মুসলিম নাম ছেড়ে হিন্দু নামও গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু সেই স্ত্রী-ই অবশেষে আদালত ঘুরে জানিয়ে দিলেন, স্বামী নয়, মা-বাবার সঙ্গেই থাকতে চান তিনি! এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের ছত্তিসগড়ের রাইপুরে।
এমনই এক ব্যতিক্রমী মামলায় শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চও জানিয়ে দিল, তরুণীর ইচ্ছাই শেষ কথা। ধোপে টিকল না স্বামীর আবেদন।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩৩ বছরের মুসলিম যুবক ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন ২৩ বছরের হিন্দু তরুণীকে। বিয়ের পরই মুসলিম নাম পরিবর্তন করে হয়েছিলেন আরিয়ান আর্য। সংসারও চলছিল ঠিকাঠাকই। কিন্তু গত ১৭ আগস্ট ওই যুবকই সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দাখিল করেন। তার অভিযোগ ছিল, স্ত্রীকে আলাদা করার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠন চাপ সৃষ্টি করছে। তাই আদালত যেন তার বক্তব্য শোনে।
মামলার শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে বিচারপতি এ এম খানউইলকর এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ গঠিত হয়। অভিযোগকারীর আইনজীবী নিখিল নায়ারের বক্তব্য শোনার পর ২৭ আগস্ট ওই তরুণীকে আদালতে হাজির করার জন্য জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সেই নির্দেশে সোমবার (২৭ আগস্ট) শীর্ষ আদালতে বিচারপতিদের সামনে হাজির করা হয় ওই তরুণীকে।
সোমবারের শুনানিতে হাজির ছিলেন ছত্তীসগঢ়ের অ্যাডভোকেট জেনারেল যুগলকিশোর গিলডা। তিনি বলেন, বিয়েটাই অবৈধ। কারণ ওই যুবক আগেও দুবার বিয়ে করেছেন এবং বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। কিন্তু তৃতীয় বিয়ের সময় আগের দুটি বিয়ের কথা পুরোপুরি চেপে গিয়েছেন। যদিও বিচারপতিরা সেই যুক্তি মানতে চাননি।
কিন্তু বিচারপতিদের সামনে নিজের মতামত জানাতে উঠে সবাইকে চমকে দেন তরুণী নিজেই। তিনি বলেন, তিনি নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু এখন আর স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান না। মা-বাবার সঙ্গেই থাকতে চান। কোনও মানসিক চাপ নয়, বরং স্বেচ্ছায় ও স্বাধীন ভাবে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিচারপতিরা ফের জিজ্ঞাসা করলে আবারও একই কথা বলেন তরুণী।
অভিযোগকারী যুবক আরিয়ানের আইনজীবী যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন, পরিবারের চাপেই তরুণী একথা বলছেন। তার উপর মানসিক চাপ রয়েছে। ফলে স্বাধীন ভাবে নিজের মনের কথা বলতে পারছেন না তরুণী।
কিন্তু প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, ‘ওই তরুণী প্রাপ্তবয়স্ক। তাই তাকে স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার দেওয়া উচিত। যদি তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকতে না চান, তাহলে সেটা বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত মামলা। তার জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলা হতে পারে।’