স্পোর্টস ডেস্ক: কেউ বলেন, ডিয়েগো ম্যারাডোনার চেয়েও নাকি নৈপুণ্যে ভাস্বর ফুটবলার। কিন্তু ক্লাব ফুটবলের মেসি আর বিশ্ব ফুটবলের মেসির মধ্যে কোথায় যেন অসম্ভব অমিল। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপে এই মেসিদেরই বিশ্বকাপে কোচিং করানো ম্যারাডোনা ২০১৮ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার দুর্দশার পেছনে মেসির কোনো দোষ দেখেন না। প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ার পথে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যারাডোনার মন বলছে, শেষ ম্যাচে কিছু একটা হবে। আর্জেন্টিনা পরের রাউন্ডে যাবে।
পুচকে আইসল্যান্ডের সাথে ড্র, ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পরিষ্কার হারে মহা বিপদে আর্জেন্টিনা। নাইজেরিয়া আইসল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়ায় এখনো তাদের আশা বেঁচে আছে। শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে হারাতেই হবে। এমন সময় ম্যারাডোনা বলছেন, '২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ খুব রুঢ়ভাবে আর্জেন্টিনাকে ঘুম ভাঙার ডাক দিয়ে গেল। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর আমরা বিশাল সমস্যায়। তারা তাদের শেষ ম্যাচ জিতলেও তাও তো অন্যের দয়ার উপর নির্ভরশীল।'
শতাব্দীর সেরা ফুটবলার ম্যারাডোনা বলছিলেন, 'আমি বলেছিলাম প্রথম দুটি ম্যাচ আর্জেন্টিনার জন্য খুব কঠিন হবে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচ। ইউরোপের দল, প্রশ্ন তোলা স্ট্র্যাটেজি এবং মেসির উপর অতি নির্ভরশীলতা- এরকম আরো অনেক কারণ আছে।' এরপরই আশা নিয়ে ম্যারাডোনা বলেছেন, 'আমার মনের ভেতর তাও এমনটাই বলছে যে কিছু একটা ঘটবে। ওখানে বসে স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেখা কষ্টের। এর উপর যদি লড়াই দেখতে না পাই তাহলে সেটা আরো বাজে লাগে।'
প্রথম ম্যাচে মেসি পেনাল্টি মিস করেছেন। তাতেই জয় হাতছাড়া হয়েছে বলা যায়। দ্বিতীয় ম্যাচে মেসিকে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আসলে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এই মেসিই কিন্তু বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের একেবারে শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে দেশকে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা এনে দিয়েছিলেন। অধিনায়ককে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে হারের পর এমন অপমানিত লেগেছে যে খেলা শেষ হতেই সোজা চলে গিয়েছেন লকার রুমে। কোনোদিকে না চেয়ে।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রায় একা হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। গেলবার মেসি বিশ্বকাপের ফাইনালে দলকে নিয়েছিলেন। চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। এবার তো শুরুতেই শেষ হওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু মেসির কি দোষ? একা খেলে কি বিশ্বকাপ জেতা যায়?
ম্যারাডোনা ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব একা না নিয়ে মেসির দিকে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়েছেন। শুনুন ম্যারাডোনার মুখেই, '২০০২ সালে গ্রুপ থেকে এগুতে পারিনি আমরা। কিন্তু রোববারের ০-২ জয়ের হারের মতো আত্মসমর্পণ করিনি। আমি জানি, সবাই আঙুল তুলছে লিওর (মেসি) দিকে এবং দলকে তার উজ্জীবিত করতে না পারার ব্যর্থতার দিকে। সে নেতিয়ে পড়েছিল, দুর্ধষ হতে পারেনি যেমনটা আমরা সবাই তার কাছে আশা করি। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে তার পেনাল্টি মিস করাটা ক্ষতিকর হয়ে গেছে। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তার কোনো প্রভাবই ছিল না। সে চেষ্টা করেছে কিন্তু কাজ হয়নি। এটা হতাশার। কিন্তু ফুটবল তো আর একজন মানুষের খেলা না। এমনটা কখনোই ছিল না। এমনটি আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের সময়ও না। মেসিকে এমন নিস্প্রভ লাগছে তার অন্যতম কারণ তার চারপাশে মানসম্মত খেলোয়ড়ের অভাব। এটা দলগত ব্যর্থতা।'-সূত্র : ওলে