প্রান্তোষ চন্দ্র দে (হালুয়াঘাট)ময়মনসিংহ: উত্তর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় ৭নং শাকুয়াই ইউনিয়নে ২নং ওয়ার্ডে রামনাথপুর গ্রামে স্কুলটি অবস্থিত। এলাকায় বেশির ভাগ মানুষই দিনমুজুর আর শ্রমিক। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাছে লেখাপড়ার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব কোনটাই তেমন ছিলনা। তাই তারা ছেলে মেয়েদেরকে লেখাপড়া শিখানোর আগ্রহ বোধ করত না।
তাছাড়া এলাকায় কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছিলনা। এলাকার কালী কুমার ভট্টাচার্য্যর জ্যোষ্ঠ পূত্র সূর্য্য কুমার ভট্টাচার্য্য (কাতু বাবু) শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন তিনি ভাবলেন এলাকায় যদি ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যায় তাহলে ছেলে মেয়েদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা যাবে।
সেই হিসাবে উত্তর ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলায় বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি সূর্য্য কুমার ভট্টাচার্য্য ( কাতু বাবু ) শাকুয়াই স্কুল নামে বিদ্যালয়টি ১৯৪১ সনে প্রতিষ্ঠা করেন। এলাকার পূর্নেন্দু সুন্দর ভট্টাচার্য্য, অর্ধেন্দু সুন্দর ভট্টাচার্য্য, ব্রজেন্দ্র কিশোর ভট্টাচার্য্য, দিজেন্দ্র কিশোর ভট্টাচার্য্য, যতীন্দ্র সুন্দর ভট্টাচার্য্য, নারায়ন চন্দ্র ভট্টাচার্য্য, জনার্দ্দন চন্দ্র ভট্টাচার্য্য, রমা প্রসন্ন ভট্টাচার্য্য, দিলীপ কুমার ভট্টাচায্যর্, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্য প্রমুখ ব্যক্তি স্কুল তৈরীর জমিতে ছিল কালী মন্দির, তাই মন্দির ভেঙ্গে স্কুল তৈরি সংক্রান্ত মতবিরোধ থাকায় পূর্বেই পরিকল্পনা করে কাতু বাবু নিজ বাড়িতে স্কুল তৈরির যাবতীয় মালামাল ও আসবাবপত্র তৈরি করে ১৯৪১ সালে ২৫ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে হ্যাজাক লাইটের আলোয় টিন দিয়ে দু ছালা ঘর তৈরী করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
যার ফলে দারিদ্র মুক্ত ও কুসংস্কার মুক্ত ১টি শিক্ষিত এবং উন্নত সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা সহজ হবে এ ভাবনায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
এলাকার ধীরেন্দ্র চন্দ্র তালুকদার (বর্তমানে প্রয়াত) জানান, এই বিদ্যালয়টিকে এক রাত্রের স্কুল বলা হত তৈরির রাতে আমি পাহাড়ার দায়িত্বে ছিলাম। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার পর দিন কিছু সংখ্যক (আগে সংগ্রহ করা ) ছাত্র/ছাত্রী দিয়ে জুনিয়র পর্যন্ত ক্লাস শুরু করা হয় এবং বিরোধীপক্ষ সহ কাতু বাবু সবাই কে নিমন্ত্রণ করে খাবারের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় উক্ত অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত হয়।
তিনি বলেন, ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক হাইস্কুল হিসাবে অনুমোদন লাভ করে নাম হয় শাকুয়াই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় । সূর্য্য কুমার ভট্টাচার্য্য (কাতু বাবু ) সাথে একাত্বতা পোষন করে রমেশ চন্দ্র দে , প্রমেশ চন্দ্র দে প্রমুখ ব্যক্তি ভ’মি দান করেন। বিদ্যানুরাগী সূর্য্য কুমার ভট্টাচার্য্য (কাতু বাবু )সুসং পরগনার জমিদার ছিলেন ১৯৫৩ সনে স্ব পরিবারে ভারত চলে যান।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে বাড়ির অংশ বিশেষ বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহারের দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন হেড মাষ্টার দিজেন্দ্র কিশোর ভট্টাচার্য্য (দিদু বাবু), পরবর্তীতে এম এ সাত্তার,এস এম শামছুল ইসলাম প্রমুখ।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে বিদ্যালয়ের আদিভবনের দক্ষিণ দিকে একটি টিনের চৌছালা হোস্টেল যা বর্তমানে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের অবস্থান । ২০১৫ সালে ২৬ জুন শাকুয়াই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. নাজিমউদ্দিন সাহেব ও প্রধান শিক্ষক মো. দৌলত আলী সাহেব এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্ঠায় কলেজ শাখার অনুমোদন লাভ করে। প্রাক্তন কৃতী ছাত্র /ছাত্রী বাংলাদেশের প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের অন্যতম শাকুয়াই বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানলগ্নে থেকে এদেশের অগণিত ছাত্র/ ছাত্রীর জন্য উচ্চ শিক্ষার পথ উন্মুক্ত ও প্রসারিত করেছে। এই স্কুলের বিপুল সংখ্যক ছাত্র/ ছাত্রী আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চপদে অধিষ্টিত হয়ে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করেছেন। এমনকি বাংলাদেশের বাইরে বহিঃবিশ্বে ও তারা বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে নিয়োজিত রয়েছেন এবং সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :