খন্দকার রুহুল আমিন : গত সপ্তাহের একটি সংবাদে আমি ব্যথিত না হয়ে পারলাম না। সংবাদটি হল, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপে কক্সবাজার পর্যটকশূণ্য। কয়েকটি টিভি চ্যানেল সংবাদটি গুরুত্বসহ সম্প্রচার করে। আমি বলতে চাই, কক্সবাজারে এখন আন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট হচ্ছে। ইকো পার্কসহ আরও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে যদি কক্সবাজারকে সাজানো যায়, তাহলে ভাল হবে। ইনানি বীচ এত সুন্দর একটি স্থান, যেখানে যাওয়ার পথে ডানদিকে সমুদ্র, বামদিকে পাহাড়, মাঝখানে কংক্রিটের রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে মনে হয় যে, সত্যি আমরা উন্নত বিশ্বে আছি। ইউরোপের কোনো একটা সুন্দর দেশে আছি।
এই জায়গায় যদি আরও হোটেল মোটেলের ব্যবস্থা করা যায়, কক্সবাজার কলাতলি থেকে ইনানি বীচ পর্যন্ত এই খানে আট থেকে দশ কিলোমিটার পর্যন্ত আমরা যদি স্কাই কেবল করতে পারি, এখানে যে সুন্দর সুন্দর পাহাড় আছে, পাহাড়ে যদি আমরা নীচ থেকে ওপর পর্যন্ত রাইড দিয়ে কটেজ করতে পারি, তাহলে বর্হিবিশ্বের যারা পর্যটন পিপাসু তারা এবং নৈস্বর্গীক বিষয়টাকে যারা ভালোবাসে তাদেরকে আকৃষ্ট করতে পারব।
আমরা দেখেছি, কানাডাতে নায়াগ্রা ফলস যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত সেই নায়াগ্রা ফলস নিয়ে আমেরিকাও মার্কেটিং করছে, কানাডাও করছে। দশ থেকে বিশ কিলোমিটার জুড়ে নায়াগ্রাকে সামনে রেখে তারা পর্যটন নগরী করেছে। স্কাইটপ রেস্তোরাঁ করেছে। অনেক কিছু করেছে। ওখানে গেলে দেখবেন পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য রেস্তোরাঁ, রাইড আরও অনেক কিছু। না দেখলে বুঝা যাবে না। আমি চাচ্ছি বাংলাদেশ এসব হোক।
ওখানে ক্যাসিনো আছে। পৃথিবীর বুকে যারা পর্যটক আছে, তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য। বাংলাদেশ সেটা না করেও অনেক দূর এগোতে পারে। বিশেষ করে ল অ্যান্ড অর্ডারটার প্রতি যদি খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়, তাহলে ভাল হয়। এখানে এয়ারপোর্ট থেকে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়, বহির্বিশ্বে যা নেই। ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া কোথাও নেই। ওখানে সব ধরনের ফ্যাসিলিটিজ পাওয়া যায়। লাগেজ বেল্ট পর্যন্ত যাওয়ার আগেই লাগেজটা চলে আসে। এখানে ইমিগ্রেশন থেকে সময় লাগে। আধাঘণ্টাতেও লাগেজ আসে না। এখান থেকেই বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়। ট্যাক্সি ভাড়া নিতে গেলে বেশি চাওয়া হয়। সে যে হোটেল থেকে পার্সেন্টেজ পাবে, সেখানে নিয়ে যায়, যেখানে হয়তো ফ্যাসিলিটিজ ভালো নয়।
এগুলোর সবকিছুই আমাদের ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের এয়ারপোর্ট থেকে এ রকম একটা সিস্টেম করতে হবে যে, ট্যাক্সি যাতে পাওয়া যায়। এখনতো অনেক ইউবা থেকে ওভার বা এই ধরনের অনেক কিছুর সার্ভিস এসেছে। ইউবায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। সব নেটওয়ার্কের মধ্যে আছে। কোনো জিনিসপত্র পাসপোর্ট হারালেও পাওয়া যাবে। কিন্তু অন্যান্য প্রাইভেট ট্যাক্সিতে সেটা পাওয়া যায় না। এই ধরনের সংস্কার করে এগোতে হবে। সবাইতো আর ফাইভ স্টার হোটেলে থাকতে যায় না। সাধারণ মানের গেস্ট হাউজে থাকতে চায়। সেখানেও তাদের সে সুযোগ সুবিধা করে দিতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, এটি একমাত্র সেক্টর যা বাইরে এক্সপোর্ট না করেও বিদেশি মুদ্রা অর্জন করা যায়। একমাত্র টুরিস্ট, পর্যটনের মাধ্যমে।
পর্যটনকে অবশ্যই শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে। হোটেল রেস্টুরেন্টে কোনো শিল্পের মর্যাদা নেই। পর্যটনকে বলা হয়েছে ইন্ডাষ্ট্রি। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যাদের মাধ্যমে এই সেক্টরটা এগোবে সেই লোকদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। শিল্পের কোনো মর্যাদা নেই। স্কিল লেবারের জন্য পর্যটন কর্পোরেশন তিনমাসে একটি কোর্স করে একশ থেকে দেড়শ জনকে ট্রেনিং দিতে পারে। প্রাইভেট সেক্টরে টুরিজম সেক্টরকে ডেভেলপ করার জন্য স্কিলড লেবার তৈরি করতে হবে। ফুড অ্যান্ড বেভারেজ থেকে আরম্ভ করে ট্যুরিস্ট গাইড পর্যন্ত স্কিল লেবার তৈরি করতে হবে।
লোকাল হোটেলগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। একজন টুরিস্টের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। এই সার্ভিসগুলো যাতে বিলম্বিক না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শহর প্ল্যানিং কিংবা ট্যুর ম্যাপ আছে কিন্তু সেটা তেমন পরিচিত নয়। যে ট্যুর ম্যাপ দিয়ে ট্যাক্সি যেতে পারে সেটা নেই। অন্যান্য ইভেন্ট বিদেশে আছে বাংলাদেশে নেই। বিদেশিরা বাসে ভ্রমণ করে সে সুযোগ নেই। এই ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। সিকিউরিটি এনশিওর করতে হবে। রাস্তাঘাট উন্নত করতে হবে।
লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ