ডেস্ক রিপোর্ট : নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের মনোনয়ন সামনে রেখে নানামুখী দ্বন্দ্বে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগে। অন্যদিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রত্যেকেই নিজেকে যোগ্য মনে করায় বিএনপিতে চলছে অঘোষিত লড়াই।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক ও দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সমর্থকদের মধ্যকার কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ দুই নেতার বাইরে অন্য একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল হাননান খান। ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের সঙ্গে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাসান ইমাম ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদ আলম টিপু। আহমদ হোসেনের সঙ্গে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এরশাদ হোসেন মালু, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সারোয়ার হোসেন খোকন ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ওরফে মণি মণ্ডল। আর আবদুল হাননান খানের সঙ্গে রয়েছেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আইয়ুব আলী।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও আহমদ হোসেন ও ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল সমর্থিত আওয়ামী লীগের আলাদা কমিটি রয়েছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আলোচিত দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাবেক এমপি ডা. মোহাম্মদ আলীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। তবে দলীয় কোন্দল প্রকট হয়ে ওঠে গত নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর। এ সময় এমপি বেলালের সঙ্গে থাকা এরশাদ হোসেন মালু চলে যান আহমদ হোসেনের বলয়ে। পরে এমপির সমর্থন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহিদুল ইসলাম সুজন। তবে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠায় তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করেন বেলাল।
বর্তমান এমপির উদ্যোগে এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ ছাড়াও এমপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত মাহবুবুর রহমান বুলবুল, ফেরদৌস আহমেদ, জারিয়ার অসীম সিং, প্রভাষক সেলিম জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন নেতাকর্মী ঠিকাদারি থেকে শুরু করে নিয়োগ ও তদবির বাণিজ্যে জড়িয়ে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। এতে জনমনে কিছুটা হলেও এমপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সক্রিয় বেলাল বলেন, তিনি ব্যাপকভাবে এলাকার উন্নয়ন করেছেন। জনগণের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। তার প্রত্যাশা, তিনি আবারও দলের মনোনয়ন পাবেন। দলীয় কোন্দল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় কোন্দল শুধু পূর্বধলায় নয়, সারাদেশেই আছে।
মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি গত নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও এলাকায় পুরোদমে প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সভা-সমাবেশ ও কর্মিসভা করছেন। তিনি বলেন, এলাকার সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করছেন তিনি। দলের মনোনয়ন পেয়ে এমপি পদে নির্বাচিত হলে অবহেলিত এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও পুলিশের সাবেক ডিআইজি আবদুল হাননান খান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নের আশায় ব্যাপক গণসংযোগ করছেন। তিনি বলেন, সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান বলেই তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। ছাত্র ও কর্মজীবনে কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। ভবিষ্যতেও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না। তার প্রত্যাশা, তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মিছবাহুজ্জামান চন্দনও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। তিনিও নিয়মিত এলাকায় এসে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় দলের হাইকমান্ড বিষয়টি বিবেচনায় এনে তাকে মনোনয়ন দেবে।
এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রাবেয়া আলীর স্বামী ডা. মোহাম্মদ আলী তিনবার এমপি হয়েছেন। এ ইমেজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন অধ্যক্ষ রাবেয়া আলী। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে তিনি এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত করছেন।
দলের জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নেত্রকোনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদারের অনুসারীরাও এলাকায় তার পক্ষে ব্যাপক জনসংযোগ করছেন। তিনি বলেন, দলীয় কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কারাবরণ করেছেন। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে মনে করছেন তিনি।
ছাত্রজীবন থেকেই নেতৃত্বগুণ বিকশিত করার পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের সহায়তায় কাজ করছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শহীদুল্লাহ ইমরান। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবা মোবারক হোসেন দলের জেলা সহসভাপতি, মা রোকেয়া বেগম জেলা মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। এলাকায়ও এ নেতার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় তিনি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। তার বিশ্বাস, সার্বিক যোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি আগামী নির্বাচনে জয়ী হবেন।
এফবিসিসিআইর সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি একেএম আবদুল্লাহ ওরফে শরীফ আহমেদ দলীয় মনোনয়নের আশায় এলাকায় গণসংযোগসহ সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, দলের দুর্দিনেও তিনি সাংগঠনিক কাজ করেছেন। হাইকমান্ড এ বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাকে মনোনয়ন দেবে বলে মনে করছেন তিনি।
দলের উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান তালুকদার ১৯৯৬ সালের নির্বাচন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে আসছেন। আগামীতেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে দলের হয়ে তৃণমূলে কাজ করছেন। আর দলের মনোনয়ন নিয়ে কারও সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই।
পূর্বধলা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও ঢাকা বার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট ড. আবদুল জলিল বলেন, ২০১০ সাল থেকে তিনি মাঠে থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজ করছেন। নেতাকর্মী ও এলাকার সাধারণ মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়ে আসছেন। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশা করছেন।
এ ছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।
এ আসনে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী পার্টির উপজেলা সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার উজ্জল। তিনি ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। সূত্র : সমকাল