ডেস্ক রিপোর্ট : ঘন কুয়াশার পাহাড় যেন ঘিরে ধরেছে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটকে। এক মাস ধরেই প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকছে ফেরি সার্ভিস। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী দুর্ভোগের সঙ্গে সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রাক শ্রমিকরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। যাত্রীবাহী পরিবহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করতে গিয়ে দীর্ঘ সময় আটকা পড়ছে কাঁচামাল ও মাছবাহী ট্রাক। এসব পণ্যে পচন ধরায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে নিত্যপণ্যের বাজারে। এরই মাঝে স্থানীয় চাঁদাবাজ ও পুলিশের বিরুদ্ধে সিরিয়াল বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
গত এক মাস ধরে ঘন কুয়াশার কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটে দিকনির্দেশক সিগন্যাল বাতি ও মার্কিং পয়েন্ট অস্পষ্ট হয়ে উঠলে ফেরি বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন সন্ধ্যা হতেই কুয়াশার তীব্রতা বাড়তে থাকে। ঘন কুয়াশায় দিন দিন সংকট ঘনীভূত হয়ে এক রকম অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে পদ্মা নদীর প্রায় ১৪ কিলোমিটার সুদীর্ঘ এ নৌপথে। এ রুটে ১৭টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ, পাঁচ শতাধিক স্পিডবোট ও ট্রলার ছাড়াও পদ্মা সেতুর মালামালবাহী নৌযান চলাচল করে। গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে ৮-১০ ঘণ্টা ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকছে। আর গত এক মাস ধরেই ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় দিনই গড়ে ৫-৬ ঘণ্টা ফেরিসহ নৌযান চলাচল বন্ধ থাকছে। কমে গেছে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা। গত এক মাস আগে প্রতিদিন গড়ে ফেরিতে ট্রিপ সংখ্যা ছিল ৭০-৮০টি। অথচ কুয়াশার কারণে গত এক সপ্তাহে গড়ে ৪০-৪৫টি ট্রিপ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। যখন ফেরি চালু হয়, শুরুতে যাত্রীবাহী পরিবহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হয়। সেক্ষত্রে বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে আসা মাছবাহী ট্রাক আটকা পড়ে। গত এক সপ্তাহ ধরে উভয় পারে প্রতিদিন আড়াই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা থাকছে।
সবজিবাহী ট্রাকচালক আলমাছ বৃহস্পতিবার বলেন, শিম, পেঁয়াজ, মরিচ ও কপিসহ বিভিন্ন সবজি নিয়ে ঢাকার কাওরানবাজারে যাব, কিন্তু ঘন কুয়াশায় ফেরি বন্ধ থাকায় আটকা পড়েছি। ফেরি চলাচল শুরু হলেও যাত্রীবাহী পরিবহনই পারাপার করা হচ্ছে। আমরা সময়মতো বাজার ধরতে পারছি না, এ কারণে সবজি নষ্ট হচ্ছে, আর বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ট্রাকচালক রায়হান মিয়া বলেন, ভারত থেকে আসা বিভিন্ন ফল বেনাপোল থেকে পাঁচটি ট্রাক বোঝাই করে আমরা ঢাকা যাচ্ছি। কিন্তু কাঁঠালবাড়ি ঘাটে এসে ঘন কুয়াশার কারণে দুদিন ধরে সিরিয়ালে আটকা রয়েছি। ফলে পণ্যে পচন ধরতে শুরু করেছে। এতে অনেক ক্ষতি হবে মালিকের।
আরেক চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছ নিয়ে ভোলা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আটকে আছি দুদিন হলো। মাছ পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আমাদের সিরিয়াল দিচ্ছে না, অথচ পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজরা টাকার বিনিময়ে অনেক পিছনের গাড়ি ফেরিতে পার করে দিচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আ. সালাম বলেন, এই মৌসুমে ঘন কুয়াশায় প্রায়ই ফেরি বন্ধ রাখতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। তবে যখনই ফেরি চলাচল শুরু হচ্ছে, আমরা যাত্রীবাহী পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স, কাঁচামালবাহী ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছি।
কাঁঠালবাড়ি পুলিশ বুথের সার্জেন্ট মনজিৎ নন্দী বলেন, ঘন কুয়াশা কেটে গেলে যখনই ফেরি চলাচল শুরু হয়, আমরা পচনশীল দ্রব্য যেমন মাছ, সবজি, ফলবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী পরিবহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করছি। কারণ এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সময়মতো বাজারে না পৌঁছানো গেলে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। স্থানীয় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য সব জায়গায়ই আছে। ইতোমধ্যেই আমরা কয়েকজন চাঁদাবাজকে ঘাট এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছি। অনেক চালক নিজেরাই আনসিরিয়ালে গাড়ি পারাপারের জন্য আমাদের কাছে প্রস্তাব দেয়। তবে আমরা সিরিয়াল ছাড়া গাড়ি পারাপার করি না। সূত্র; আমাদর সময়