শিরোনাম
◈ ভিত্তিহীন ও এআই-জেনারেটেড তথ্য নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় দুঃখ প্রকাশ রিজভীর ◈ রোকেয়া পদকজয়ীদের সংবর্ধনায় প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস, ওসমান হাদির ওপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ পদকপ্রাপকদের ◈ আফগানিস্তানকে হারিয়ে যুব এশিয়া কাপে বাংলা‌দে‌শের সুন্দর সূচনা ◈ আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে: তারেক রহমান ◈ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন কে এই ফয়সাল? ◈ ওসমান হাদির হামলা নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নামে 'ভুয়া ফটোকার্ড' ছড়ানোর বিষয়ে সতর্কতা ◈ 'ফিরে এসো প্রিয় ওসমান হাদি': আসিফ আকবর ◈ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন: ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত, ইসির পরিপত্র জারি ◈ ওসমান হা‌দির চিকিৎসায় মে‌ডিকেল বোর্ড গঠন, সর্বশেষ যা জানা গেল ◈ তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও নিরাপত্তা নিয়ে যা জানালেন সালাহউদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:৫২ সকাল
আপডেট : ০৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৫:৫২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মার্কেটিং : সম্পর্ক স্থাপন ও সম্পর্ক উন্নয়নের দর্শন ও প্রযুক্তি

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান : সারা দুনিয়াতেই মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। একাডেমিক ডিসিপ্লিন হিসেবে আমেরিকায় বা পাশ্চাত্য দেশগুলোতে ৮০ বছর এবং বাংলাদেশে প্রায় ৪০ বছর ধরে মার্কেটিং পড়ানো হয়। মার্কেটিং যেহেতু ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই ব্যবসায় অনুষদেই বিষয়টি পড়ানো হয়।
সাধারণত পণ্য বিক্রি করার যে কৌশল সেটাকে আমরা মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণ বলি। অর্থাৎ পণ্য সামগ্রি উৎপাদন কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আগে পরে যে কাজগুলো রয়েছে তাই মার্কেটিং। কিন্তু এখন আর বিষয়টি ওইগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বলা হয়, মার্কেটিং এখন ব্যবসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাও এখন মার্কেটিং। সেই অর্থে সরাসরি আমরা যাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বলি, যারা পণ্য বেচা-কেনা করে বা সেবা বেচা কেনা করে এর বাইরেও বহু প্রতিষ্ঠান এখন মার্কেটিংয়ের কৌশল প্রযুক্তি এবং দর্শনকে ব্যবহার করছে। এক সময় মনে করা হতো সাবান, শ্যাম্পু, কোকাকোলা এগুলো উৎপাদন এবং বিক্রির সঙ্গে মার্কেটিং জড়িত। কিন্তু এখন তা বলা হয় না। ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, সামাজিক সমস্যা, যেমন নারী নির্যাতন, পরিবেশ দূষণ, শিশু-কিশোরদের অধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তন, আবহাওয়া পরিবর্তন এ সবগুলোই এখন মার্কেটিংয়ের বিষয়।
ছোট একটা উদাহরণ দেওয়া যায়, সেনাবাহিনীও আজকাল বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কারণ, তারা চায় মেধাবী ছেলেরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিক। এটাও আসলে মার্কেটিং। যেখানে মানুষ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে এবং প্রভাবিত করবে, উদ্বুদ্ধ করবে এবং প্ররোচিত করবে, তখন আমরা বলব এটার সঙ্গে মার্কেটিং জড়িত। মার্কেটিং শুধু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্যই নয়, অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, পুলিশ বাহিনী থেকে আরম্ভ করে আমাদের সমাজের অসংখ্য সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। যেমন, নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দল দলীয় প্রার্থীর জন্য ক্যাম্পেইন করে এটাও মার্কেটিং। মার্কেটিংয়ের চারটি হাতিয়ার আছে, এগুলো হলো : প্রোডাক্ট, প্রাইস, প্লেস এবং প্রমোশন। এই হাতিয়ারগুলো এখন সবাই ব্যবহার করছে।
প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে খুব সহজে এখন প্রোডাকশনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। টেকনোলজি এত দ্রুত গতি সম্পন্ন যে খুব সহজেই পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু প্রোডাক্ট বিক্রি করা এত সহজ নয়। কারণ মানুষের মন পাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত তাকে ধরে রাখা কেবল উন্নত প্রযুক্তি অথবা যন্ত্রপাতি দিয়ে হয় না। এখানে হিউম্যান রিসোর্স দরকার, দরকার দক্ষ জনশক্তি, যারা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবে এবং মেইনটেইন করবে। আমরা তো প্রফিটের কথা বলি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই প্রফিট করতে হবে। অন্যান্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও প্রফিটের কথা চিন্তা করে। যদিও আমরা এগুলোকে ননপ্রফিটেবল অর্গানাইজেশন বলি তারপরও এদের একটি সামাজিক লক্ষ আছে, উদ্দেশ্য আছে। লাভই হোক বা উদ্দেশ্য অর্জনই হোক, যেটিই আমরা করতে চাই না কেনো এটার একটা সফলতা থাকা লাগবে যার জন্য মানুষকে আকর্ষণ করার একটা ক্ষমতা থাকা চাই। আর সেটা কোনো যন্ত্র দিয়ে করা যায় না। প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে প্রোডাকশনে শ্রমিক কম লাগলেও মার্কেটিংয়ে লোক বেশি লাগছে। অর্থাৎ একদিকে প্রযুক্তিগত কারণে শ্রমশক্তি কম লাগছে কিন্তু এগুলো বিক্রির জন্য মার্কেটিংয়ে আরও বেশি লোক লাগছে। কোম্পানির হিসাব নিকাশ সফটওয়ার ব্যবহার করে করা গেলেও মানুষকে প্ররোচিত করে, উদ্বুদ্ধ করে প্রোডাক্টটা কেনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত তাকে স্থায়ী ক্রেতায় রূপান্তর করা এটা কোনো মেশিনপত্র দিয়ে করা যায় না। যার কারণে দেখা যাচ্ছে হিউম্যান রিসোর্সের ডিমান্ডটা আরও বেড়েছে।
কোনো অর্থনীতি যত গ্রো করবে, সাইজ যত বড় হবে তখন ক্রমান্বয়ে একটা সার্ভিস অর্থনীতিতে পরিণত হবে। যেখানে প্রোডাকশনে কাজের লোকের পরিমাণ কমে যাবে আর সার্ভিস এবং অন্যান্য কাজগুলো যেমন, বিক্রি এবং ক্রেতা সন্তুষ্টির জন্য আফটার সেলস সার্ভিস দেওয়া, সাপোর্ট দেওয়া এই কাজগুলোর গুরুত্ব বেড়ে যাবে। যার কারণে যে অর্থনীতি যত উন্নতি হবে সেই অর্থনীতিতে মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব তত বেশি বেড়ে যাবে।
আমি বলব না মার্কেটিং পেশায় সফল হতে হলে মার্কেটিং পড়ার কোনো দরকার নেই। যদিও পৃথিবীতে যত লোক মার্কেটার হিসাবে সবচেয়ে সফল তারা কোনোদিন মার্কেটিং পড়েনি। ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ, এমবিএ পড়েনি। বিল গেটস্ ভর্তি হয়েছিলেন এমবিএতে তিনিও পড়েননি। দুই সেমিস্টার পড়ে চলে গেলেন। তার চেয়ে বড় মার্কেটার তো আর দুনিয়াতে নেই। আমাদের আবুল হাশেম, পার্টেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান, আমাদের মোস্তফা কামাল, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান, প্রত্যেকে প্রায় ৪০টা করে কোম্পানির মালিক। মার্কেটিং পড়া তো দূরের কথা, ইউভার্সিটির কাছেও আসেনি। অতএব মার্কেটিংয়ে সফল হওয়ার জন্য বাজারকে বুঝতে পারা এবং মানুষকে বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকলেই হয়।
সবাই এখন মার্কেটিং পড়তে চাচ্ছে। আমরা বলি সবাইকে মার্কেটিং পড়ানোর দরকার নেই। তবে ব্যবসায় অনুষদের যে কোনো সাবজেক্টে পড়তে চাইলে অবশ্যই মার্কেটিং লাগবে। কারণ মার্কেটিংয়ের কাজ হলো কাস্টমার ধরা, প্রোডাকশনের কাজ হলো প্রোডাক্টের উৎপাদন শিডিউল মেইনটেইন করা; হিউম্যান রিসোর্সের কাজ হলো দক্ষ লোক নিয়োগ দেওয়া, ট্রেইনিং দেওয়া, মোটিভেট করা, প্রমোশন দেওয়া; রিসার্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কাজ হলো নতুন প্রোডাক্ট বাজারে আনার জন্য কাজ করা; ফাইন্যান্সের কাজ হলো হিসাব মেইনটেইন করা ও অর্থসংস্থান করা। এগুলো হলো কোম্পানির ডিপার্টমেন্টাল কাজ। কিন্তু পুরো কোম্পানির কাজ কি? কোম্পানির কাজ হলো, সবাই মিলে কাস্টমার ধরবে এবং ধরে রাখবে। এটা একা মার্কেটিং বিভাগের কাজ না। আমি যত ভাল মার্কেটিং ম্যানেজার নিয়োগ দিই, যদি আমার প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্ট নি¤œমানের জিনিস তৈরি করে, তাহলে তিনি বিক্রি করতে পারবে না, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজার যদি বিক্রয় বিভাগে অদক্ষ লোক নিয়োগ দেয়, তাহলে মার্কেটিং ম্যানেজার কি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবে? তাই এইচআরএম ম্যানেজার, মার্কেটিং ম্যানেজার, ফাইন্যান্স ম্যানেজার সবারই মার্কেটিংয়ের জ্ঞান থাকতে হবে। সবাইকে মার্কেটিং পড়তে হবে এটা বলছি না। তবে বিজনেস অনুষদে যারা পড়বে তাদের মার্কেটিংয়ের নূন্যতম জ্ঞান থাকতে হবে।
লেখক : উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা : আশিক রহমান ও মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়