জাপানে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষের বেশি মানুষ হঠাৎ করেই পরিচিত পরিবেশ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তাদের পরিবার বা বন্ধু কেউই জানে না তারা কোথায় চলে গেছে। এই প্রথাকে জাপানি ভাষায় ‘জোহাৎসু’ বলা হয়, যার অর্থ “হঠাৎ করে উবে যাওয়া।”
জোহাৎসুরা সাধারণত ঋণ, পারিবারিক অশান্তি, চাকরির চাপ বা ব্যর্থতার কারণে এই পথ বেছে নেন। তারা গোপনে পরিচিত স্থান ছেড়ে অচেনা বা নির্জন স্থানে চলে যান, যেখানে কেউ তাদের চেনে না। সেখানে তারা নতুনভাবে জীবন শুরু করে, বিভিন্ন কাজ করতে থাকে এবং পরিচিতদের থেকে দূরে থাকেন।
এই ধরনের মানুষদের সহায়তার জন্য জাপানে বিশেষ সংস্থা তৈরি হয়েছে, যার নাম ‘নাইট মুভারস’। তারা সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে জোহাৎসুদের নতুন বাসস্থান, কাজ এবং জীবনযাত্রার বন্দোবস্ত করে দেয়। এজন্য সংস্থাটি পারিশ্রমিকও গ্রহণ করে।
১৯৯০-এর দশকে জাপানে অর্থনৈতিক ধসের সময় এই প্রথা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। তখন হতাশাগ্রস্ত মানুষরা আত্মরক্ষা হিসেবে নিখোঁজ হওয়ার পথ খুঁজতে শুরু করেন। তখন হাতরি নামের এক ব্যক্তি প্রথমবার এই ধরনের সংস্থা তৈরি করেন।
জাপানের আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনা বা অপরাধমূলক কারণ না থাকলে কারও গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা হয় না। তাই জোহাৎসুরা সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে, যেমন এটিএম ব্যবহার বা বাজারে যাওয়া, নিরপেক্ষভাবে।
তবে সব জোহাৎসুই চাপ থেকে মুক্তি পায় না। অনেক সময় একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জোহাৎসুরা প্রায়ই মানসিক একাকীত্ব ও চাপের কারণে নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন।
জাপানের এই অনন্য সামাজিক প্রথা আজও চলমান এবং হতাশাগ্রস্ত মানুষের জন্য এক ধরনের আশ্রয় ও নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়।