স্পোর্টস ডেস্ক : শেষ বেলায় জমে গেল ভারত-ইংল্যান্ড লর্ডস টেস্ট। তৃতীয় দিনের শেষ ওভারে জাক ক্রলির সঙ্গে ধুন্ধুমার লেগে গেল ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করে ৩৮৭ রান।
ভারতেরও প্রথম ইনিংস শেষ হয় একই রানে। প্রথম ইনিংস টাই হল। ১০ বছর আগে লিডসে ইংল্যান্ড ও নিউ জিল্যান্ড ম্যাচেও টাই হয়েছিল প্রথম ইনিংস। দু'দল প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ৩৫০ রান। তারও আগে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড ম্যাচে এই ঘটনা প্রথম ঘটেছিল।
তৃতীয় দিনের শেষ বেলায় দ্বিতীয় ইনিংসে এক ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় ইংল্যান্ড। আর ওই এক ওভারেই ঘটে যায় যাবতীয় নাটক। ইংল্যান্ডের ওপেনাররা ইচ্ছা করে দেরিতে ব্যাট করতে নামেন। ২ ওভার বল করাই যেত। কিন্তু ইংল্যান্ড ব্যাটারা সময় নষ্ট করায় মাত্র এক ওভার বরাদ্দ হয় ইংল্যান্ডের জন্য। সেখানেও চলে সময় নষ্টের খেলা। জাক ক্রলি নানা বাহানায় সময় নষ্ট করতে থাকেন। যা দেখার পরে চটে যান ভারতীয় ক্রিকেটাররা। বিশেষ করে শুভমান গিল এগিয়ে যান ক্রলির দিকে। ক্রলির সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন গিল। ভারতীয় ক্রিকেটাররা ক্রলির সময় নষ্টের জন্য হাততালি দিতে থাকেন। উল্টো দিক থেকে এগিয়ে এসে বেন ডাকেটও তাঁর সঙ্গী ক্রলির সমর্থনে কিছু বলেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি হয়ে ওঠে উত্তপ্ত।
তৃতীয় দিনের খেলা এভাবে শেষ হল। চতুর্থ দিন কী বারুদ লুকিয়ে রয়েছে, তা ঈশ্বরই জানেন। তৃতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের রান বিনা উইকেটে ২। তৃতীয় দিন লর্ডস জুড়ে কেবল লোকেশ রাহুল। চার বছর পরে লর্ডসে ফিরে তিনি সেঞ্চুরি হাঁকান। লোকেশ রাহুল এক প্রান্তে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকলেন। ১৭৭ বল ক্রিজে কাটালেন। একশো করার পরই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন তিনি। তার আগে অবশ্য গড়লেন রেকর্ড। লর্ডসে রাহুলের নামের পাশে লেখা দুটো সেঞ্চুরি।
লোকেশ রাহুল ছাড়া লর্ডসের বাইশ গজে দুটো বা তার বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে কেবল দিলীপ ভেঙ্গসরকারের। বস্তুতপক্ষে দিলীপ ভেঙ্গসরকার লর্ডসে তিনটি সেঞ্চুরি করেন। সেই কারণেই তাঁকে 'লর্ড অফ লর্ডস' বলা হত। এশিয়ার প্রথম ওপেনার হিসেবে লোকেশ রাহুল লর্ডসে লিখে গেলেন রূপকথা। কোনও এশিয়ান ওপেনার লর্ডসে দুটো সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ভেঙ্গসরকার তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ক্রিকেটের মহাতীর্থে। কিন্তু ভেঙ্গসরকার ওপেনার ছিলেন না।
কম যাননি ঋষভ পন্থও। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে পন্থ ১৪১ রান জোড়েন। রান আউট হওয়ার আগে পন্থ করেন ৭৪ রান। তাঁর ইনিংসে সাজানো ছিল ৮টি চার ও ২টি ছক্কা। লোকেশ রাহুলের ১০০ রানের ইনিংসে ছিল ১৩টি বাউন্ডারি।
রাহুল ও পন্থ ফিরে যাওয়ার পরে রবীন্দ্র জাদেজা ও নীতীশ কুমার রেড্ডি ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাোয়ার কাজ করেন। জাদেজাকে ব্যাট হাতে ফের সপ্রতিভ দেখাল। চলতি সিরিজে তৃতীয় অর্ধশতরান জাদেজার। তিনি ও নীতীশ রেড্ডি ৭২ রান জোড়েন পার্টনারিশপে। নীতীশ রেড্ডিকে (৩০) স্টোকস ফেরানোর পরে ওয়াশিংটন সুন্দর পার্টনারশিপ গড়েন জাদেজার সঙ্গে। ৫০ রান জোড়েন তাঁরা। যেটা চিন্তার ব্যাপার তা হল, এত সুন্দর ইনিংস এগিয়ে নিয়ে গিয়েও ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস আর টপকানো হল না ভারতের। শেষের দিকে আকাশদীপ (৭), জশপ্রীত বুমরাহ (০) ও ওয়াশিংটন সুন্দর (২৩) দ্রুত ফিরে যাওয়ায় ভারত শেষ হয়ে যায় ৩৮৭ রানে।
লর্ডস টেস্টের এখনও দু'দিন বাকি। এই টেস্টের প্রতিটি বাঁকে লুকিয়ে রয়েছে আরও নাটক। ভারতকে ম্যাচে ফেরাতে পারেন বোলাররা। দ্রুত উইকেট ফেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে শেষ করাই হবে তাদের পাখির চোখ। তার পর চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে হবে। টেস্টের বাকি দুটি দিন সব অর্থেই উত্তেজক হতে চলেছে।